নীল চোখ (১ম পর্ব)



"আজ ২ মাস হল। প্রতিদিনই সেই রাসায় যেয়ে দাঁড়াই তবে এখন আর নীলাকে দেখা যায় না। কলেজে আসে না। নাম্বারও বন্ধ। ওর সাথে গত ২ মাস কোন যোগাযোগ নেই। ও কেমন আছে, কি হয়েছে কিছুই জানা নেই আমার। ওর বাড়িও চিনি না। আর ওর কোন ফ্রেন্ডও পরিচিতি নেই। যোগাযোগ বা খোজ নেওয়ার কোন উপায় নেই। বলতে গেলে বড় রকমের ডিপ্রেশনের মাঝে আছি।" - এইটুকু লেখার পর আর ইচ্ছা করছে না লিখতে। কারন ডায়েরী লেখার অভ্যাস আমার একেবারেই নাই। এর থেকে বোরিং যেন আমার কাছে আর কিছুই নাই। তাও লোকজন এত টাইম নষ্ট করে কিভাবে যে ডায়েরী লেখে বুঝি না। যাই হোক, আমাকে দিয়ে এর বেশি আর লেখা সম্ভব না।

ডায়েরী বন্ধ করে উঠতে না উঠতেই আম্মু-আব্বু আর আপু একসাথে এসে হাজির। ৩ জনকে একসাথে দেখেই বুঝেছি কিছু তো একটা বিষয় অবশ্যই আছে। এবার আম্মু বলা শুরু করলো,
আম্মু - আমরা ভেবে দেখলাম তুই তো অনেক বড়ই হয়ে গেছিস। আর ভাল চাকরীও করিস। তাই এখন আর দেরি করাটা উচিৎ হবে না। আমরা অনেকগুলো মেয়ে দেখেছি। এর মাঝে একটা মেয়েকে খুবই ভাল লেগেছে। তাই যদি তোর কেউ পছন্দ থাকে তাহলে তার সাথে আমাদের আলাপ করিয়ে দে নাইলে আমরা যাকে পছন্দ করছি তাকে বিয়ে করে নে।
আমি - উফফ!! আমি এখন বিয়ে করবো না। আমি তো এখনো ছোট। আর আপনারা লাগছেন আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
আপু - আম্মু ওরে একটা ফিডার কিনে দিয়েন। ও তো ছোট।
আমি - আপু তুই সত্যিই পারিস 😒
আপু - আমি কি ভুল কিছু কইছি নাকি?
আম্মু - তোরা থাম তো। এখন কথা হল, অনিক তোর কি পছন্দের কেউ আছে?
আমি - না।
আম্মু - তাহলে কাল আমরা তোকে সাথে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।
আমি - অসম্ভব। আমি তো যাবই না।
আম্মু - তুই যাবি, তোর বাপও যাবে।
আব্বু - ওর বাপ এমনিই যাবে। ওরেই রাজি করাও তুমি।
আমি - আপনারা যাই বলেন। আমি যাচ্ছি না।
আম্মু - আচ্ছা তুই শুধু সাথে চল। যদি মেয়ে তোর পছন্দ না হয় আমরা বাসায় এসে না করে দিবো। ঠিক আছে? ১ ঘন্টাই তো। কাল রেডি থাকবি। এখান থেকে বিকাল ৪ টায় বের হব সবাই।
আমি - হুম।

আম্মু মেয়েটার ছবি আমাকে দিয়ে গেল। তবে আমার দেখার কোন আগ্রহ নেই। দেখিও নাই। টেবিলের এক কর্ণারে, যেপাশে সব অকাজের জিনিস থাকে সেখানে রেখে দিলাম ছবিটা।

মনে মনে চিন্তা করছি শুধু শুধু এত ঝামেলা না করে কাল মেয়ে দেখা শেষে বাসায় এসে বলে দিব পছন্দ হয় নাই। ঝামেলা শেষ।

পরেরদিন মেয়ে দেখার জন্য ওই বাসায় গেলাম। বসে আছি বোকার মত। বড়রা সবাই কথা বলছে। আমি একা বোকার মত বসে আসি। আম্মু তো আমার মোবাইলটাও নিতে দেয় নাই। নাহলে অন্তত মোবাইল দিয়ে কিছু তো করা যেত। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মেয়ে আসলো। তবে চেহারা এখনো দেখিনি। ইচ্ছাও নাই। একদম আমার সামনেই বসলো। তাও তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম না। আম্মু নাম জিজ্ঞাসা করলো। উত্তরে মেয়েটা বলল, নীলিমা। তবে আমার কাছে কন্ঠটা চেনা চেনা লাগলো। শুধু চেনা না। মনে হল কন্ঠটা যেন নীলার। এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। সত্যি বলতে মেয়েটা দেখতে অসাধারণ। চোখদুটো বিড়ালের চোখের মত। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবই লেন্সের কারসাজি। ছোট থেকে বিড়ালের চোখের মত চোখযুক্ত মেয়েদের আমার পছন্দ না। অবশ্য এটা থেকে বুঝতেই পারছিলাম যে খুব স্টাইলিশ মেয়ে হবে। তবে একটা জিনিস দেখে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। সেটা হল, মেয়েটার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল মেয়েটা অনেক বেশি পরিমাণ খুশি। তবে বেচারি এটা জানে না যে খুব তাড়াতাড়িই সে রিজেক্ট হতে যাচ্ছে। 😹🔫

একটু পর সবাই বের হয়ে গেল রুম থেকে। আমাদেরকে আলাদা কথা বলার সুযোগ দিলো। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
আমি - আপনি কি এই বিয়েতে আসলেই রাজি নাকি বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছেন?
নীলিমা - আমি নিজ ইচ্ছাতেই বিয়েতে রাজি।
.
ভাবছিলাম মেয়েটা না বললেই কাজ শেষ। কিন্তু তা হলনা। মনে হচ্ছে এবার আমারই কথা বলতে হবে।
.
আমি - দেখেন, আগেই বলি আমি অনেক বিজি মানুষ। আমি মোটেই কাউকে সময় দিতে পারি না। ভবিষ্যতেও পারবো না। তাছাড়া বিয়েতে আমারও সমস্যা আছে। আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইনা।
নীলিমা - কেন?
আমি - সে অনেক ঘটনা।
নীলিমা - অন্য কাউকে ভালবাসেন নাকি?
আমি - অনেক বেশি। তাই আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভবনা।
নীলিমা - তাহলে শুধু শুধু আমাকে দেখতে আসার কি দরকার ছিল? আমার বাপের এতগুলা টাকা আপনার জন্য নষ্ট হল। হুহ। সরাসরি সেই মেয়েকে দেখতে গেলে আমাদের এতগুলা টাকা নষ্ট হত না আপনারদের জন্য আয়োজন করতে যেয়ে।
আমি - ওকে এখন দেখতে যাওয়া সম্ভব না। আর আমি ফ্যামিলিকেও বলতে পারবো না।
নীলিমা - বাহ। এত ভয় পান!!!! আমি সত্যিই কনফিউজড, আমাকে কোন ছেলে দেখতে আসছে নাকি কোন মেয়ে!!! 😹
আমি - ইউ শাট আপ। যা যানেন না তা নিয়ে কথা বলবেন না। পুরো বিষয়ই অন্যরকম। না শুনলে বুঝবেন না।
নীলিমা - তাহলে বলেন। আমার হাতে অনেক টাইম আছে।
আমি - সরি। আমার হাতে সময় নেই। আর আপনাকে বলার প্রয়োজনবোধ করি না।
নীলিমা - হেহেহে। ভাব না দেখিয়ে সোজাসুজি বললেই হয় যে আপনি মেয়েদের মত লজ্জাবতী। 😹
আমি - শাট আপ। শুনবেন? শুনবেন আপনি? তাহলে শোনেন,
.
"তখন আমি ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছিলাম। ফাইনাল এক্সাম শেষ হওয়ার পর অনেকদিন ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া হয় নাই। তাই সকাল-সকাল ইউনিভার্সিটিতে  যাচ্ছিলাম ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। যাওয়ার সময় রাস্তা পার হচ্ছিলাম। রাস্তা বেশ চওড়া। পার হতে হতে আমি রাস্তার ঠিক মাঝখানে, হঠাতই চোখ গেল রাস্তার ওপারে একটি মেয়ের ওপর। মেয়েটি বোরকা পরা ছিল। তবে আমি আটকে গিয়েছিলাম তার চোখ দেখে। মেয়েটির চোখে যে এত মায়া ছিল তা বলার মত না। আর সব থেকে বড় কথা হল, মেয়েটির চোখদুটো ছিল নীল। আত দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে এটা লেন্সের কারসাজি না। চোখদুটো আসলেই নীল। ছোট থেকেই নীল চোখের প্রতি আমি অন্যরকম দুর্বলতা অনুভব করি। হঠাতই সজোরে ধাক্কা অনুভব করলাম। আর কিছুই মনে নেই।
চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। পাশে আমার ফ্রেন্ডরা। আমি জিজ্ঞাসা করি সবাইকে, কি হয়েছিল, আমি এখানে কেন।
আমার প্রশ্নের উত্তরে ওরা বলল, আমি নাকি রাস্তা পার হতে হতে মাঝখানে এসে হঠাত থেমে গিয়েছিলাম, একটা মোটরসাইকেল এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। কপাল ভাল থাকায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। আর রাস্তার আসেপাশের লোকজন আমাকে এখানে এনে ভর্তি করে ওদেরকে কল দেয়।
এসব শুনে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
আমি - আচ্ছা আমাকে এখানে ভর্তি করার জন্য কোন মেয়ে আসছিল নাকি? নীল চোখের একটা মেয়ে?
তাওহীদ - সালা VXD তুই কোনদিন আর ভাল হবি না।
আমি - মামা সিরিয়াসলি। আসছিল নাকি বল না।

এবার আর কেউ কিছু বলল না। সবাই মিলে ভাল মত ধোলাই করলো আমাকে। অতঃপর বাকিটা ইতিহাস।

সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলাম। মেয়েটার চিন্তায় এতদিন ঘুম আসে নাই। কেন যে এমন হল সত্যিই বুঝলাম না। কখনো কোন মেয়েকে দেখে আমার এমন লাগেনি। আর তাছাড়া এই মেয়েটার আমি শুধু চোখদুটোই দেখেছি। খোজা শুরু করলাম। প্রথমে খোজ নেই ফ্রেন্ডদের কাছে যে ওরা কোন নীল চোখের মেয়েকে কখনো দেখেছে কিনা। কেউই দেখে নাই।
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

একটি ছ্যাকা খাওয়ার গল্প

চিঠি=বাঁশ (২য় পর্ব)

ব্রেকআপ অনু (পর্ব-১)