চিঠি=বাঁশ (৭ম পর্ব)
সকালবেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। টাইম দেখার জন্য মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখি একটা ম্যাসেজ। ম্যাসেজটা ছিল সরনের। ম্যাসেজে লেখা ছিল,
"কাল Practical এক্সামে টাইম মত চলে আসিস।" ম্যাসেজটা রাতে পাঠিয়েছে। দেখেই মনে পরে গেল, আরেহ আজ তো ১০ টায় এক্সাম আছে। কিচ্ছু পড়িও নাই আবার কোন প্র্যাকটিক্যাল আঁকাইও নাই। হায় হায়। কি যে করি। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তখন বাজে সকাল ৬ টা।
.
উরাধুরাভাবে পড়া শুরু করে দিলাম। আজ Higher Math। খাতায় আঁকা আঁকিও করলাম। সব করতে করতে ৯ টা বেজে গেল। তাড়াতাড়ি উঠে ব্রাশ করেই বের হয়ে পরলাম। অবশেষে একদিন অন্তত ঠিক টাইমে কলেজে পৌঁছেছি।
.
কিন্তু ক্লাসে যেয়ে দেখি সবাই চলে আসছে। ব্যাপার কি?
টাইম দেখালাম, এখনো ১৫ মিনিট বাকি আছে। ব্যাপার না। সবাই হয়তো আগেই চলে আসছে। এমনিতেও ক্লাসে কোন,স্যার ছিল না। ক্লাসে। ঢুকতেই সেই পুরানো নামে (লেট লতিফ) ডাক দিলো শান্ত।
- ওই হ্লা, আইজ পুরাই টাইম মত আইছি। ১৫ মিনিট আগে আইছি। হুম। (আমি)
- বেটা বেকুব, তুই ৪৫ মিনিট লেট।
- কি!!!! এক্সাম কয়টা থেকে ছিল?
- ১০ টা। আর এখন বাজে ১০:৪৫
- মোবাইল বের করে দেখি ৯:৪৫ বাজে।
(তখন আরো একটা কথা মনে পরলো, আমি তো গতকাল ঘড়ির টাইম ১ ঘন্টা পিছিয়ে রেখেছিলাম।)
আর কোন কথা না বলে শুরু করে দিলাম এক্সাম। সবাই বই গাইড যে যা পারছে দেখে দেখে লিখছে। আমি তো কিছুই নেই নাই। আমি কি করবো?
সরনের খাতা থেকে ছবি তুলে নিয়ে ওইটা দেখে লেখা শুরু। একটু পরে ভাইবার জন্য স্যার ডাকলো। গেলাম ভাইবা দিতে। শুধু নাম সই করলাম। আর ৫০ টাকা দিলাম। আমাকে আবার ক্লাসে পাঠিয়ে দিলো। তাহলে এই ছিল ভাইবা!!!!!
এক্সাম দিলাম পুরাই দেখে দেখে। শুধু শুধুই সকাল থেকে কষ্ট করে পড়লাম। 😒
.
যাই হোক, এক্সাম শেষে ক্লাস থেকে বের হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি এমন সময় কেউ পিছন থেকে ডাকলো,
- ওই অনু দাড়া
.
পিছে ঘুরেই দেখি রাইসা। হ্লি আজই আমাকে তুই করে বলছে।
.
- তুমি আমাকে "তুই" বলছো কেন জান? 😁
- লাত্থি না খাইতে চাইলে ভদ্র হ। এখন থেকে তুই করেই বলবো। কারন আমরা ফ্রেন্ড। আর তাছাড়া "তুমি" করে বললে আমার জান মাইন্ড করতে পারে।
- হায়রে কপাল। কি হইছে বল এখন?
- এখন চল আদিল আর মিনহাজের সাথে কথা বলতে হবে।
- কি নিয়ে?
- তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করামু।
- কি উপলক্ষে? আর তাছাড়াও ওরা আমার শত্রু।
- বাঁশ দিতে চাস?
- হ।
- তাইলে চল। যা কই, তাই কর। বেটা বেকুব
.
গেলাম ওর সাথে। আর মনে মনে ভাবছিলাম, আসলেই কি আমারে বেকুব বেকুব লাগতেছে? সকাল থেকেই যেই দেখছে সেই বেকুব বলতেছে। 😒
.
যাই হোক, ফ্রেন্ডশিপের পর্ব শেষ করে রাইসা আর আমি রিকশায় (ভাড়া রাইসার দায়িত্ব। আমি গরিব মানুষ😁) করে যাচ্ছিলাম আর প্লান করছিলাম যে কিভাবে ওদের বাঁশ দিবো।
.
সব শেষে নেমে গেলাম রিকশা থেকে। ওইদিকে আবার তিশাকে ওয়েট করিয়ে রেখেছি। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তাড়াতাড়ি যেতে যেতেও ৩৪ মিনিট লেট। 😜
.
- আপনি আবারো লেট।
- কিহ!!!!
- কেন, বিশ্বাস হচ্ছে না?
- বিশ্বাস হচ্ছে, কিন্তু গতকাল সারা রাত তোমাকে কি শিখাইলাম? 😒
- Oops... কাল থেকে বললে হয় না? 😁
- না। 😒
- প্লিজ।
- তাহলে কাল থেকেই কথা হবে, বাই।
- আরে দাড়াও প্লিজ।
- এইতো 😍😁...... এবার বলো কেমন আছো?
- ভাল। তুমি কেমন আছো?
- ভালো। জানো আজ কি হইছে আমাদের স্কুলে?
- কি হইছে? 😱
- তানিয়াকে আজ স্যার কান ধরাইছে। তাও আবার ......... (ও বকবক করতেছে, এদিক আমি গুন করে গান গাচ্ছি)
- ঝুম, এরে রারে রারি রে রে
ঝুম, এরে রারে রারি রে রে
- এই ঝুম কে? (হঠাত আমাকে থামিয়ে দিয়ে, রাগান্বিত ভাবে)
- ঝুম কে?
- সেটাই তো, কে এই ঝুম?
- আমি কিভাবে চিনবো?!!!!
- বার বার ঝুম ঝুম করতেছো, আর বলো চিনো না। তাই না? আমি পুরান হয়ে গেছি? আচ্ছা, যাও যার সাথে ইচ্ছা প্রেম করো। নিশ্চয় মেয়েটা আমার থেকে কিউট। তাই না? আমাদের স্কুলের ক্লাস ১০ এর ঝুম আপুকেই শেষ পর্যন্ত পছন্দ হলো? আমি কি দেখতে এতই খারাপ?
- আমার কথা টা আগে শোনো।
- রাখো, তোমার কথা। আমি যাই। বাই
.
এই বলেই উঠে চলে গেল। আর আমি তো মিনার রহমানের "ঝুম" গান টা গাইছিলাম। এইটা কিছু হইলো?
ওর পিছে দৌড়াতে দৌড়াতেই মোবাইলে "ঝুম" গান টা প্লে করলাম। এখন ও থেমে গেল। যাক, তাইলে ব্যাপার টা বুঝছে যে, আসলেই ওইটা গান ছিল। ও আমার দিকেই আসলো। কাছে এসে,
- আমি চলে যাচ্ছি এই খুশিতে জোরে সাউন্ড দিয়ে গান শুনতেছো? খুব ভালো লাগতেছে তাই না? যাও যাও, আমি চলেই যাচ্ছি। আর তোমাদের মাঝে বাধা হয়ে থাকবো না।
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। কপাল আমার। এই মেয়ে মানুষ গুলা যে এত্ত বেশি বোঝে ক্যান আল্লাহই জানে। যত্ত নেগেটিভ চিন্তা আছে সব মনে হয় আল্লাহ্ এদের মধ্যে দিয়ে দিছে। কি আর করার, বাসায় গেলাম। বাসায় যেয়ে কল দিয়ে কত্ত কাহিনী করে ওর রাগ ভাঙালাম।
পরে জানলাম, ও আগেই বুঝছিল ওইটা গান। কারন ওই গান ওরও অনেক প্রিয়। আমার সাথে ঝগড়া করতে নাকি ওর খুব ভালো লাগে। 😭
.
এরপর বিকালে বের হলাম একবারে সবাইকে বাঁশ দিতে। রাইসা প্রথমেই আমাকে নিয়ে গেল আদিলের কাছে, সেখানে আদিল আর মিলা বসে গল্প করছে। যেয়েই বললাম,
- দোস্ত, তুই আজ যে মেয়েটারে প্রপোজ করলি সেই মেয়েটা রাজি হয়ে গেছে। তোর তো কপাল খুলে গেল। একসাথে ৩ টারে ক্যামনে কন্ট্রোল করিস তুই? তার ওপর আবার আরেকটা!!!!!
.
এবার পাশে তাকিয়ে বললাম,
- আরেহ, এইটা তোর সেই জিএফ না যারে কয়দিন পর ছাইড়া দিবি?
.
এবার, মিলার দিকে তাকিয়েই বললাম,
- ওহ নো, আমি তো ভুলেই গেছিলাম ভাবি এইখানে। আসলে আপনাকে দেখছিলাম না তো, তাই আর কি। কিছু মনে করবেন না ভাবি।
.
আদিল বা মিলা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি আর রাইসা দৌড়ে পালানোর মতই পালিয়ে গেলাম। আর আসার আগে আদিলকে বলে আসলাম, "মাম্ম ভালো থাকিস, আর ওরে কি বলবো আমারে ম্যাসেজে জানাইস।" 😂
.
একজনের বাঁশ কমপ্লিট। এবার গেলাম মিনহাজের কাছে, যেয়েই ঠিক আগের মত ওর জিএফকে না দেখার ভান করে মিনহাজকে বললাম,
- দোস্ত, তোর সেই জিএফের কি অবস্থা যারে খাইয়া ছাইড়া দেওয়ার কথা ছিল? কি যেন নাম, সোমা না কি যেন?
.
এবার পাশে তাকিয়েই বললাম,
- ওহ, ভাবি আপনি এখানে!!! আচ্ছা আপনারা কথা বলেন আমরা যাই।
.
এই বলেই আবারো চলে আসলাম। কাউকে কিছু বলার টাইমই দিলাম না। 😂
এইবার মিশন শান্ত। হ্লারে বড় ধরনের বাঁশ দেওয়ার প্লান আছে। কিন্তু একটা ব্যাপার মাথায় আসছিল না, সব হ্লায় কি একদিনে ডেটে বের হইছে? আর বের হলেও রাইসা এত খবর ক্যামনে জানলো? এগুলা রাইসাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
- আরে, আর বলিস না। সবগুলারে আমিই রাজি করাইছি আজ ডেটে যেতে। আর বলছি আজ ডেটে গেলে ওদের বড় মাপের উপহার দিবো। আর কি লাগে, সবগুলা বলদের মত রাজি হয়ে গেছে। 😂
হাসাহাসি করতে করতে গেলাম শান্তর কাছে। শান্তকে দেখেই বললাম,
- কিরে দোস্ত, তুই নাকি রাইসাকে এখন আগের মত টাইম দিস না। তোর নাকি আরো জিএফ আছে? এগুলা কি শুনি? দেখা রাইসাকে সাথে করে নিয়ে আসছি। (আমি)
- এই শান্ত, এই মেয়ে টা কে? আমি আগেই জানতাম। ছিঃ তুমি এত নিচ। আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব ভালো লাগলো তোমার? আমাদের ২ বছরের রিলেশনের কথা তুমি একবারও ভেবে দেখলা না? ঠিক আছে, তোমাদের মাঝে আমি বাধা হয়ে থাকবো না। তোমরা ভালো থেকো। বাই (রাইসা)
.
এসব বলেই ২ জন তাড়াতাড়ি চলে আসলাম সেখান থেকে। কাউকে কিছু বলার সুযোগই দেই নাই। আসলে ওদের ব্যাপার টা বুঝতেও তো সময়ের দরকার। আর ওদের বোঝার আগেই আমাদের কাজ শেষ। 😂
.
মনে মনে চরম আনন্দে ছিলাম। আজ একদম খেলে দিয়েছি। 😂
.
.
বেশ কয়েকদিন আর ঘর থেকে বের হই নাই। এরপর সবার সাথে আবার ভাই ভাই ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল।আর এইবার আমাদের ফ্রেন্ডস সার্কেলে নতুন যোগ হলো রাইসা,আদিল এবং মিনহাজ। কিন্তু শান্ত, মিনহাজ আর আদিল ৩ জনেরই ব্রেকআপ হয়ে গেছিল। 😂
তাতে কি, আমরা তো ভাই ভাই। তাই এসব কিছু না। যদিও ইতিমধ্যে ওদের নতুন জিএফও খুজে দিয়েছে রাইসা।
আমার দিন তো ভালই কাটছিল। তিশার সাথে ঝগড়া,বকবক, হাসাহাসি , ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা, সব মিলিয়ে ভালই কাটছিল দিন। সত্যি বলতে লাইফের বেস্ট মোমেন্টগুলা মনে হয় এগুলাই। আবার কিছুদিন পর আমার আপুর বিয়ে। বিয়েতে অনেক মজা করবো সবাই ঠিক করেই রেখেছি। জাস্ট অসাধারণ দিন কাটছিল।
.
একদিন আমি আর তিশা একসাথে হাত ধরে হাটছিলাম। একটা রাস্তা আছে, ওই রাস্তায় হাটা শুরু করলে হাটতেই ইচ্ছা করে। এত্ত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ রাস্তার পাশ দিয়ে, জাস্ট বলার মত না। আমি যেতে চাইছিলাম না ওইদিকে, কিন্তু তিশা যাবেই। আগেরদিন নিয়ে গিয়েছিলাম ওর খুব ভালো লেগেছিল। তাই আজ আবার যাবে বায়না ধরেছে। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আসলে আমি একটু বেশিই অনিচ্ছা দেখাচ্ছি। কারন যেন, ও আমার হাত ধরেই হাটতে থাকে। বেশ মজা লাগছিল। 😍
.
কিন্তু এর মাঝে, হঠাত পিছন থেকে কে যেন ডাক দিলো তিশাকে। আমি আর তিশা ২ জনেই পিছে ঘুরে পুরাই Shocked......... এ তো রাইসা!!!!!!!
যাহ সালার, আজই মনে হয় ব্রেকআপ হবে। তিশা তো ভয়ে শেষ। রাইসা কাছে এসেই বলা শুরু করলো,
- আগেই বুঝেছিলাম, তোদের ২ জনের মাঝে কিছু একটা চলছে। আজ নিজ চোখে দেখে নিয়েছি। খবর আছে তোদের। বিশেষ করে তিশার। আমি বাসায় যেয়েই আব্বুকে বলবো। ব্লা ব্লা ব্লা....
এগুলা শুনতে শুনতে আমার হার্ট এ্যাটাকের মত অবস্থা। আর আমার থেকে বেশি খারাপ অবস্থা তিশার। রাইসা বকবক শেষ করে চলে গেল। এখন কি করা যায়। সব বুঝি আজই শেষ হয়ে যাবে।
.
আজ বুকে মাঝে এক অন্যরকম কষ্ট অনুভব করতে লাগলাম। মনে হচ্ছে সবই হারিয়ে যাচ্ছে আমার। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। এরকম কষ্ট এর আগে কোনদিন আমার হয়নি। সব একদম গুলিয়ে যাচ্ছে.......
রাইসা তো গেল কিন্তু আমি পরে গেলাম টেনশনে। কি করা যায় এসব ভাবতে ভাবতেই শেষ।
.
হঠাত করেই মাথায় ২০০ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলে উঠলো। আমি তো রাইসার একটা বাঁশ রেডি করেই রেখেছি। সাথে সাথেই কল দিলাম রাইসাকে।
- ওই কুত্তা, তুই আবার আমাকে কল দিছিস। তোর তো সাহস কম না!!! আমাকে বলে কোন লাভ নাই। আমি সব আজ আব্বুকে বলবোই বলবো।
- যা। যা খুশি কইয়া দে। তাইলে তিশাও আংকেলকে একটা ভিডিও দেখাবে আজ।
- তো ভিডিও দেখানোতে কি হবে? আব্বু খুশি হয়ে ওকে মাফ করে দিবে ভাবছিস? হুহ, জীবনেও না।
- হে হে হে হে..... মাফ না করলেও তোর বাঁশ কনফর্ম। জীবনে আর সরনের সাথে যোগাযোগ করা লাগবে না। 😂
- মানে!!!! মানে কি!!!! কিসের ভিডিও!!!!!
.
তখন প্লে করে দিলাম ভিডিও টা। সেখান থেকে যে শব্দ আসছিল তা ছিল এরকম,
- কিরে দোস্ত, তুই নাকি রাইসাকে এখন আগের মত টাইম দিস না। তোর নাকি আরো জিএফ আছে? এগুলা কি শুনি? দেখা রাইসাকে সাথে করে নিয়ে আসছি। (আমি)
- এই শান্ত, এই মেয়ে টা কে? আমি আগেই জানতাম। ছিঃ তুমি এত নিচ। আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব ভালো লাগলো তোমার? আমাদের ২ বছরের রিলেশনের কথা তুমি একবারও ভেবে দেখলা না? ঠিক আছে, তোমাদের মাঝে আমি বাধা হয়ে থাকবো না। তোমরা ভালো থেকো। বাই (রাইসা)
.
এইটুকু শুনেই রাইসা যেন থমকে গেল। আর বলল,
- এটা কবে করছিস তুই?
- আমার কাছে টাইমমেশিন নাই। তাই যেসময়ের ঘটনা ওই সময় ছাড়া অন্য টাইমে ভিডিও করা সম্ভব না। 😂
- তুই আসলেই একটা হারামি। (অনেক রেগে)
- এতদিনে তাইলে বুঝছিস। এখন ভদ্রভাবে আমাদের সাথে দেখা কর। তারপর কথা বলি।
- আসতেছি।
কল কাটার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। রাইসা হাজির। ওকে দেখেই বললাম,
- আরে জানের দোস্ত নাকি? আইছোস তাইলে? ভালা আছোস?
- হারামি। তুই ওই ভিডিওটা ডিলিট কর।
- করে দিবো বেবি। আমার আর তোর ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেলেই ডিলিট করে দিবো।
.
এবার আর কিছুই বলল না, রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাইসা। আমিই বললাম,
- আচ্ছা, তুই এত্ত সার্থপর ক্যারে?
- কিহ, আমি সার্থপর!!!
- হ, তুই সার্থপর। নিজে প্রেম করবা, সমস্যা নাই। আর ছোট বোন প্রেম করলেই দোষ।
- আরে, ও তো ছোট।
- হ, এখনো তো ফিডার খায়। যা বাসায় নিয়া ফিডার খাওয়া। 😒
.
এভাবে কথা বলে সব সমাধান করে নিলাম। আর চিন্তামুক্ত হয়ে গেলাম।
.
এভাবে ভালোই দিন যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাত আবার একটা ঝড় আসলো। আর সেই ঝড়ের নাম এক্সাম। 😭
.
আবার সেই প্যারা। আর ভালো লাগে না। তাও শুরু করে দিলাম এক্সাম। প্রথমদিন এক্সাম হলে যেয়ে তো সবাই অবাক। সবার সিট একসাথে। মানে, আমি,সরন,শান্ত,তাওহীদ আমরা চারজন তো একসাথেই ভর্তি হইছি। তাই আমাদের টা আলাদা ব্যাপার। এখন দেখি রাইসাও আমাদের সাথেই। রাইসার সিট টা পরছে আমাদের পাশের সারিতে। কিন্তু আমাদের দিকে। মানে, মাঝখানে শুধু যাওয়া আসার পথ। ঐ একই সিরিয়ালে মিনহাজ আর আদিলেরও সিট।
.
ভালোই এক্সাম দিচ্ছিলাম সবাই মিলে। লাস্ট এক্সাম ছিল জীববিজ্ঞান। কেউই এই সাব্জেক্ট পড়ে নাই। আমি কয়েকবার ভাবছিলাম জীবনের প্রথমবার নকলটা করেই ফেলি। কিন্তু সাহস হলো না। এক্সাম হলে যেয়ে দেখি সালারা সবাই আনছে। আমি একাই নেই নাই। কি আর করার। এক্সাম শুরু। ওরা তো লিখে খাতা ভরে ফেলছে। আমি সবার কাছে এত্ত চাই কেউ দেয় না। সবগুলায় কয়,
- দোস্ত একটু ওয়েট কর। লিখা শেষ করে দিচ্ছি।
.
মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। আমি বললাম,
- দাড়া স্যাররে কইয়া দিমু। স্যার,
- দোস্ত প্লিজ কইস না (সবাই)
- ও স্যার
- দোস্ত পায় ধরি কইস না। তোরে এখনি দিচ্ছি। এই নে,
- স্যার,
- কি হয়েছে? (স্যার)
- স্যার প্রশ্নের এই চিত্রটা ভুল আছে।
- আচ্ছা, আমি সিওর হয়ে সংশোধন নিয়ে আসছি। অপেক্ষা করো।
- মা**টোস্ট (সবাই, স্যার যাওয়ার পর)
- 😂
.
তারপর ওদের থেকে নিয়ে এক্সাম শেষ করলাম। আর এক্সামের ১ সপ্তাহ পর আমার আপুর বিয়ে। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো। আমরা সবাই খুব এক্সসাইটেড। অনেক মজা করবো এমন প্লান করে রেখেছি।
.
বিয়ের দিন মজা তো করছিলাম। বরযাত্রী যখন আসলো তখন আমাদের সব ফ্রেন্ডগুলার চোখ আকাশে। কত্ত কিউট কিউট মেয়ে আসছে। ওয়াও। সবাই তো অলরেডি ভাব নেওয়া শুরু করে দিসে, যদি সবারই জিএফ আছে। আমাদের সাথে রাইসাও ছিল, সাথে ছিল তিশা। তাই আমার আর সরনের নজর মাটি ছাড়া অন্য যায়গায় যেতে পারলো না। একটু পর ইচ্ছা করেই সবার থেকে একটু দূরে থাকার চেষ্টা করলাম যেন, কিউটি গুলারে ভালো মত দেখা যায়।
.
এরই মাঝে ক্রাশও খেয়ে গেলাম। বুঝলাম, এটা ভাইয়ার খালাতো বোন। 9-10 এ পড়ে হয়তো। সাথে ওর একটা ছোট বোনও আছে। 7-8 এ পড়ে হয়তো সেটা। ২ টাই কিউটের ডিব্বা। আমি বেশ ভালই ভাব নিচ্ছিলাম। কথা বললাম ওদের সাথে, পরিচিত হলাম। বাহ, সব তো সহজেই হচ্ছে। ভালই।
.
ওদের সাথে ভালোই পরিচিত হয়ে গেলাম। এবং জানতে পারলাম বড় বোনের নাম সুমাইয়া আর ছোট টার নাম মিশু। সুমাইয়া পরে ক্লাস ১০ এ। আর মিশু ক্লাস ৮ এ। ২ টাই সেই কিউট।
.
আমার সাথে ওদের ২ টাকে দেখে আমার অন্য ফ্রেন্ডগুলা ভলে আসলো। আফটার অল ভাব নিতে তো আর পয়সা লাগে না।😂
.
ঠিক তখনই মাথায় আরেকটা শয়তানি বুদ্ধি আসলো। আমি নিজেই আমার ফ্রেন্ডদের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে একজন একজন করে কথা বলার সুযোগও করে দিলাম। আমার সব ফ্রেন্ডরা তো আমাকে কি যে বলবে খুজেই পাচ্ছে না। ওরা আজ প্রথমবার বুঝতে পারলো যে আমি আসলেই ওদের জানের দোস্ত, প্রকৃত দোস্ত। আর সবসময় ওদের ভালো চাই।
.
সবই ভালো। অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে গেল। আমি বাসায়ই আছি। অনেক ক্লান্ত, কিন্তু ঘুমাতে পারবো না। অনেক কাল বাকি। স্লাগুলারে বাঁশ দিতে হবে না? 😂
.
ঢুকলাম ফেসবুকে। সবার গার্লফ্রেন্ডই আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে। ওইসময় ওদেরকে সুমাইয়া আর মিশুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরের কাহিনী তো সব আমার মোবাইলে ভিডিও এবং ছবি তোলা আছে। এখন সেগুলোই সবার জিএফ এর কাছে সেন্ড করার সময়। 😂
.
এবং সেটাই করলাম। জানি পরেরদিন সকালে বোম ব্লাস্ট হবে। কিন্তু পরেরদিন কেউ আমাকে পাবে না। পরেরদিন কি, পুরা সপ্তাহই কেউ আমাকে পাবে না। 😂
.
পরেরদিন গেলাম আপুর বাসায়। ওইখান থেকে আপুকে নিয়ে আসা হবে আজ। সেখানে যেতে না যেতেই সুমাইয়া আর মিশুর সাথে দেখা। সুমাইয়া আর মিশুর মধ্যে আমার কাছে অবশ্য সুমাইয়াই বেশি কিউট লাগে। 😁
.
সেখানে যেয়ে তো ওদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। 😁
অবশ্য মনে মনে সুমাইয়ার সাথে লাইনও মারতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু, তিশা ইজ দা ফ্যাক্ট 😒
.
ব্যাপার না। লাইন না মারতে পারলাম, কিন্তু মজা তো নিতে পারবো 😁
সেটাই করলাম।
.
এভাবে অনুষ্ঠানের দিনগুলো ভালই কাটছিল। ওদিকে আমার দোস্তগুলার তো মনে হয় অবস্থা খারাপ। আফটার অল আমি বাঁশ দিছি (আমার দেওয়া বাঁশগুলা খুবই নিখুঁত এবং আছোলা হয়)। 😂
.
যদিও এর মাঝে ওরাও আমার বাঁশ দেওয়ার জন্য তিশার কাছে অনেক কিছুই বানিয়ে বলেছে। কিন্তু লাভ হয় নাই। কারন আমি কাঁচা প্লেয়ার না। আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তিশাকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে রেখেছি। ওদের কথা কখনই বিশ্বকস করবে না।
.
যতদিন অনুষ্ঠান হল, ততদিন তো আর আমাকে কেউ পেল না। তাই কলেজে যেতে ভয়ই করছিল। তাও আজ আসলাম। কোন স্লারেও দেখতে পেলাম না। হঠাৎ শান্ত এসে আমাকে বলতেছে,
- দোস্ত, একটা কবিতা লিখে দে না প্লিজ।
- কবিতা!!! কবিতা দিয়ে কি করবি?
- আমাদের ক্লাসের মুন্নিকে দিবো।
- তোর না জিএফ আছে? 😒
- তোর জন্য আর থাকলো কই। সেইদিনই তো ব্রেকআপ। 😒
- ওহ, কি কবিতা লাগবে?
- এমন কোন একটা যা দিয়ে মেয়ে পটানো যাবে। ওইযে যেটা রাইসাকে দিসিলাম ওইটার মত।
.
এইটুকু শুনেই মনে মনে ভয় পেয়ে উঠলাম। সব মনে পরে গেল। তাই আমি বললাম,
- দোস্ত, আমারে পাগলা কুত্তা এমনকি তুই কামর দিলেও আর কবিতা লিখে দিচ্ছি না। কারন এখনো আমাদের ক্লাসে এই কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স্যারের মেয়ে পড়ে। হুদ্দাই আরেকটা বাঁশ খাওয়ার ইচ্ছা নাই। 😂
.
গল্প শেষ হলেও বাঁশ থাকবে আজীবন। ইহা শেষ হবার জিনিস না 😁✌..................
(সমাপ্ত)
Comments
Post a Comment