একটি ছ্যাকা খাওয়ার গল্প
- বুঝছো অনিক, আমার তো এটাও ব্রেকাপ হয়ে গেল। এখন কি করি কও তো? আরেকটার ব্যবস্থা না করলে আর হচ্ছে না।
- এটা আপনার কত নাম্বার ছিল?
- ৫৮ নাম্বার মনে হয়।
- আপনার তো লজ্জা করা উচিত। ৫৮ নাম্বার ব্রেকাপের পরও আরো চাই! আরে ভাই, আমার মত ছোট ভাই গুলার জন্যও দুইএকটা পিওর মেয়ে রাখেন না। নাইলে আমরা কি চাঁদে যামু বিয়া করার সময়?
- আরেহ পাইয়া যাবা। আমার একটা ব্যবস্থা করে দাও।
- আমারে দেখে কি আপনার মনে হয় আমি পাগল?
- ভালো কথা এখন তো আমার আবার আরেকজনের সাথে দেখা করার কথা। থাকো, আমি যাই।
- কার সাথে দেখা করার কথা?
- তোমার ভাবি।
- কি!!! আপনার না ব্রেকাপ হয়ে গেল?
- আরে, বোঝো না কেন। ব্যাকআপ রাখা লাগে। এটা ব্যাকআপ হিসাবে রাখছিলাম এখন কাজে আসতেছে।
।
এতক্ষন আমার আর সৌরভ ভাইয়ার মধ্যে কথোপকথন চলছিল। ইনি এমনই একজন মানুষ যার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এনার একটা দিকে বিশেষ ক্ষমত আছে। সেটা হল মেয়ে পটানোয়। মনে হয় না রাজবাড়িতে এখনো কোন সুন্দরী মেয়ে আছে যার সাথে ওনার রিলেশন ছিল না। এমনি এমনি তো আর ৫৮ নাম্বারে যায় নাই। আর আমিও একজন মানুষ, যে কিনা সারা জীবনে একটাকেও পটাতে পারলো না। যাই হোক, এটা দুঃখের ব্যাপার না। এটা গর্বের ব্যাপার।
।
পরের দিন সকালে সৌরভ ভাইয়ার কল। রিসিভ করলাম,
- অনিক কই তুমি?
- বাসায়। কেন?
- আমার ল্যাপটপে সমস্যা হইছে। মনে হয় Windows দেওয়া লাগবে। তুমি আসো তো একটু।
- আচ্ছা, আসতেছি। কোন টেনশন নাই। আমি আপনার ল্যাপটপ পুরা নতুন করে দিবো। 😁
.
আসলে অন্য সাধারণ সবার থেকে মোবাইল কম্পিউটার সম্পর্কে আমার ধারনা একটু বেশি তো, তাই মোটামুটি পরিচিতরা সমস্যায় পরলে আমাকেই কল দেয়।
।
গেলাম সৌরভ ভাইয়ার বাসায়। বুঝলাম Windows না দিলেও চলবে। তবে যে Windows দেওয়া সেটা ভালো না। হার্ডওয়্যারের সাথে ভালো খাপ খায়নি। যার ফলে কাজ ঠিক মত করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার নতুন Windows দেওয়াই বেটার। আমার কাছে সব সময় Pendrive,Disk, Memory, Portable HardDisk এগুলা থাকেই। আমার ইউজ করা বেস্ট Windows টা সেটাআপ দিতে যেয়ে দেখি তার হার্ড ডিস্কে সমস্যা। তাই Windows নিচ্ছে না।
।
সমস্যা সমাধানের জন্য ইউটিউবের সার্চ দিলাম। ভালো একটা ভিডিও পেয়ে গেলাম। ভিডিওর মত কয়েকটা কমান্ড টাইপ করে ইন্টার চেপে দেখি হার্ড ডিস্ক ফাকা!!
।
সর্বনাশ! সব ডিলিট। কিছু না বলে চুপচাপ সেটআপ শেষ করে নিজের রাস্তায় কেটে পরলাম। একটু পর সৌরভ ভাইয়ার কল,
- অনিক, তুমি কইছিলা আমার ল্যাপটপ নতুন করে দিবা। সত্যিই নতুন কইরা দিলা?
- না মানে ভাই কাহিনী হইছে কি
- ওই তুই থাম তো। তোরে পাই সামনে খবর আছে।
।
আল্লাহয় বাঁচাইছে। 😂😂😂
বিকালে প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম। অটোতে উঠলাম। অটো সম্পূর্ণ খালি। রাস্তা যা ভাঙা, বলার মত না। ঝাকিতে জীবন শেষ। একটু সামনে যাওয়ার পরই অতি সুন্দরী এক মেয়ে উঠলো অটোতে। আর উঠে আমার পাশেই বসলো। আহা। কি আনন্দ। আমি তো জানিই কি হবে এখন। কারন রাস্তা যা ভাঙা। অতঃপর ২ মিনিটের মধ্যেই আমার ধারনা বাস্তবে পরিনত করে মেয়েটা আমার গায়ের ওপর পরলো। 🙊😜
.
ফিলিংস টা ভালই। মেয়েটা তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসে আমাকে সরি বলল। যদিও আমি মাইন্ড করিনি। আমার তো ভালই লেগেছে। 😜
.
মনে ফুর্তির শেষ নাই। কারন সামনে আরো বড় একটা ভাঙা আছে। আমিও মোবাইল হাতে নিয়ে টাইম দেখছি। ১ মিনিট পরেই সে আবার আমার গায়ের উপর পরবে। 😂🔫
.
১ মিনিট হতে আর ৩ সেকেন্ড। ৩ ২ ১
।
আহ। সে এবার গায়ের ওপর একটু বেশি ই জোরে পরেছে। একটু ব্যাথাও পেয়েছি। তবে টাইমিং ভালোই ছিল। কয় সেকেন্ড হল, সেটা দেখার জন্য মোবাইল দেখতে যেয়েই দেখি মোবাইল নাই!!!!!
.
এক চিৎকার,
- অটো থামান!!!
।
অটোওয়ালা থেমেই পিছে তাকিয়ে দেখে আমি নাই। অন্যদিকে আমি দৌড়াচ্ছি আর মোবাইল খুজতেছি। ভাঙার পাশে যেয়ে খুজতে লাগলাম। সাথে সাথেই পেয়ে গেলাম। তবে পাশের খাদে। গতকালের বৃষ্টিতে কাদা হয়ে আছে সেখানে। মোবাইল সম্পূর্ন মেখে গেছে কাদায়। আর ডিসপ্লে তো শেষই।
।
কষ্টভরা মন নিয়ে অটোতে উঠে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আবার রওনা দিলাম। মেয়েটা সরি তো বলল, তবে সরিতে যদি আমার মোবাইল ঠিক হয়ে যেত তাহলে দুঃখ ছিল না।
।
তারপরেও একটা জিএফ পাচ্ছি মোবাইল ভাঙার জন্য, খারাপ কি?
।
বাসায় ফিরলাম। মোবাইল ভাঙার কথা আম্মুকে বললাম। আম্মু তো ঠিক করে দিতে রাজি না। কিছুই করার নাই। এভাবেই চলতে হবে।
.
বিকালে আবার সৌরভ ভাইয়ার সাথে দেখা।
- অনিক, গুড নিউজ আছে!
- কি?
- নতুন জিএফ তো পাইয়া গেছি।
- জিএফ কি আপনার জন্য রেডিই থাকে নাকি!!!
- হা হা হা। কিন্তু তোমার মুড অফ মনে হচ্ছে?
- আসলে মোবাইল ভেঙে গেছে।
- আলহামদুলিল্লাহ। আমি কালই মসজিদে ৫ টাকা দিবো। আমারে কতই যে বাঁশ দিছো এই মোবাইল দিয়ে। যাক, ভালই হইছে।
- এই দিন দিন না আরো দিন আছে, সেই দিন নিয়ে যাবে এই দিনের কাছে।
- হইছে হইছে। হা হা হা হা। যাবা নাকি?
- কোন যায়গায়?
- চলো তোমার নতুন ভাবি দেখাইয়া আনি।
- চলেন।
।
এভাবে মনের মধ্যে শয়তানি চিন্তা নিয়ে রওনা হলাম। আমার উদ্দেশ্য ব্রেকাপটা কনফর্ম করে আসা। 😂🔫
.
.
অপেক্ষা করছি আমি আর সৌরভ ভাইয়া। হঠাত দেখলাম অটোর সেই মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আহা, কাজ হয়েছে। তাহলে এবার সিঙ্গেলত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছি। তাহলে অটোতে মেয়েটাকে ভালই পটিয়েছি।
।
মেয়েটা আসছে আমার দিকেই। আমি অপেক্ষায় আছি, সে আমাকে ডাক দিবে। ওয়াও
।
কিন্তু হঠাতই মেয়েটা বলে উঠলো, "হাই সৌরভ!"
।
এটা কি হল!! আমি সৌরভ ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম,
- ভাইয়া আপনার কিছু হয় নাকি মেয়েটা?
- আরেহ কি কও মিয়া! এইটাই তো তোমার নতুন ভাবি।
।
আকাশ থেকে পড়লাম। কিছু হইলো এইটা? গেছিলাম ব্রেকাপ করাতে কিন্তু দুঃখের ঠ্যালায় কিছু না করেই চলে আসলাম।
।
আসার পথে,
- ভাই
- কি হইছে কও, তার আগে কও ভাবি কেমন লাগলো?
- আসলে মেয়েটারে আমি পছন্দ করে রাখছিলাম। আপনি ছোট ভাইয়ের হবু জিএফ রেও ছাড়লেন না?!! এ কেমন বিচার? 😭
- ওহ। আগে বলবা না। ওর সাথে তো আমার আরো ৭ দিন আগে থেকে পরিচয়। তবে যাই হোক, এখন থেকে ও তোমার ভাবি। খারাপ নজরে দেখবা না।
।
।
দিন এভাবেই যেতে লাগলো। উনি প্রতিদিনই মেয়েটার সাথে ঘুরতে বের হওয়া শুরু করলো। কত রেস্টুরেন্টে যেত। রেগুলার অনেক টাকা খরচ করতো। আর আমরা ট্রিট চাইলেই তার কাছে টাকা থাকতো না। মনে মনে যে কতই বদদোয়া করেছি হিসাব নাই।
।
মোটামুটি ১৫ দিন পর দেখি সৌরভ ভাইয়া এসেছে। একটু অবাকই হলাম। কারন উনি তো প্রতিদিনই এই টাইমে মানে বিকালে ওনার জিএফ কে নিয়ে ঘুরতে যায়। জিজ্ঞাসা করলাম,
- কি অবস্থা ভাই, আজ গেলেন না ঘুরতে?
- না। আজ নাকি ওর কি কাজ আছে তাই আজ ও আসতে পারবে না। তাই এখন আমি একাই ঘুরতে যাচ্ছি। যাবা নাকি?
- চলেন।
।
হঠাত কি মনে করেই যে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। যেয়ে দেখি সেই মেয়েটা আরেকটা ছেলের হাত ধরে জানু বাবু এসব বলে গল্প করছে। দেখে এমন হাসি পাচ্ছিলো আমার বলার মত না। আমি মজা নিচ্ছি। এবার সৌরভ ভাইয়া এগিয়ে গেল ওইদিকে। আমি একটু দূর থেকে দেখছি।
তাদের মাঝে কথা শুরু হল,
- কি ব্যাপার নিঝুম, এই ছেলেটা কে? (সৌরভ ভাইয়া)
- আপনি কে ভাইয়া? আর তাছাড়া আমার নাম তো নিঝুম না। আমি রুপা।
- আমি ভাইয়া!!! মানে কি এসবের?!!!
- কি পেয়েছেন আপনি!!
- কি ভাই, কি সমস্যা? (নতুন ছেলেটা)
- দেখো ভাই, ওর সাথে আমার আজ ১৫ দিনের রিলেশনশিপ চলতেছে। (সৌরভ ভাইয়া)
- গাঞ্জা খাইছেন? ওর সাথে আমার ২ বছরের রিলেশন। ভালয় ভালয় এই যায়গা থেকে যান, নাইলে খবর আছে।
।
বেশ মারামারির পর্যায়ে চলে আসলো। আমি গিয়ে সৌরভ ভাইয়াকে নিয়ে চলে আসলাম।
আমার যা আনন্দ হচ্ছিলো তা আর বলার মত না। 😂🔫
আমার আর সৌরভ ভাইয়া মধ্যে কথা শুরু হল,
- এটা কি হল অনিক? আমার এখন কি হবে? 😭
- ভাই টেনশন নিয়েন না। হতে পারে এটা ওই মেয়েটার যমজ বোন।
- ঠিক বলছো।
।
এবার ২ দিন ধরে খোজ নিয়ে জানা গেল, মেয়েটা ছেলে পটানোয় পুরাই এক্সপার্ট। আর সৌরভ ভাইয়া ছিল ওর ৮৭ নাম্বার বিএফ। মেয়েটা প্রতি ৭ দিন পর পর বিএফ পালটায়। আর প্রতি বিএফ এর কাছে আলাদা আলাদা নামে প্রেম করে। তাও উনি ১৫ দিন চান্স পাইছিল। কপাল বেশি ভালো। 😂🔫
।
এটা জানার সাথে সাথেই আমি সৌরভ ভাইয়াকে বললাম,
- ভাই, চলেন আপনারে ট্রিট দিমু।
- কিসের ট্রিট? আমি ছ্যাকা খাইছি এই জন্য?
- আরেহ নাহ। আপনি আমার ছ্যাকা টা নিজে খাইলেন। এই ছ্যাকা টা তো আমার খাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খাইলেন আপনি। তাই ট্রিট দিতাছি। 😂🔫
- ট্রিটের মুড নাই। মজা নিতাছো, নাও। সময় আমারো আসবে।
।
অতঃপর একটা নির্মম ছ্যাকা খাওয়ার গল্পের সমাপ্ত ঘটলো। 😂🔫
Comments
Post a Comment