ব্রেকআপ অনু (পর্ব-২)



এভাবে সবকিছু ভালই চলছিল। আরো ১ টা বছর খুব আনন্দের সাথে কেটে গেল। এর মাঝে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সাইজ বড়ও হয়েছিল। তবে আবার ছোট হতে হতে আবার সেই ২ অনুতেই চলে আসলো। এর কারন আমরা ২ অনু কাউকে রিলেশনে যেতে দিতাম না। রিলেশন শুরুর আগেই শেষ করে দিতাম। আর এই কাজের জন্য আমাদের ২ জনের মাথায় বুদ্ধির অভাব ছিল না। তাই এরা না পেরে সার্কেল ছেড়েই বের হয়ে যেত। আর এখন সার্কেল বলতে আমরা ২ জনই।

তবে ভালই ছিলাম। আর অনু প্রায়ই, শুধু প্রায় বললে ভুল হবে। বলতে হবে সুযোগ পেলেই জ্বালায়। যেমন,
একদিন হঠাত রাত ২ঃ৩০ দিকে কল দিয়ে,
- দোস্ত কই তুই? (অনু, খুব ব্যস্তভাবে)
- হোস্টেলে। ক্যান, কি হইছে?
- খুব জরুরী কথা আছে।
- ক।
- আরেহ সিরিয়াস ব্যাপার। তোর তো চোখে ঘুম। আগে চোখ ধুয়ে আয়।

আমি ওর কথা বলার এক্সপ্রেশন দেখে ভেবে নিছি সিওর কোটি টাকার কোন কাহিনী পাইয়া গেছে। আমি তাড়াতাড়ি চোখ ধুয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলাম,
- কি হইছে এইবার ক।
- ঘটনা হচ্ছে, তুই কি ঘুমাচ্ছিলি?
- আরেহ, এগুলা বাদ দে। যা কইতে চাইছিলি সেইডা ক।
- আমি এইডাই জিগাইতে চাইছিলাম যে, তুই ঘুমাইছিলি কিনা। 😂🔫
- ********* নিজেও ঘুমাবি না। আমারেও ঘুনাইতে দিবি না। অকারনে আবার কল দিলে তর একদিন কি আমার একদিন।

কল কেটে দিলাম। মেজাজ পুরাই খারাপ করে দিলো। একে তো আমার রাতে ভালো ঘুম আসে না। আবার দিনেও ঘুমানোর টাইম পাই না। আজ শান্তিতে ঘুমাইছিলাম। তাও দিলো। 😖

আবার আরেকদিন,
রাত ৩ টার দিকে কল,
- হ্যালো (আমি)
- দোস্ত খুব বিপদে পরছি একটু হেল্প কর।
- কি হইছে?
- কওয়ার টাইম নাই। তুই তাড়াতাড়ি আমার হোস্টেলে চলে আয়। প্লিজ।
- পাগল নাকি!!! আমি এত রাতে গার্লস হোস্টেলে যাবো!!! আর ধরা পরলে কি হবে জানিস?
- প্লিজ দোস্ত খুব বিপদে পরছি রে।
- আচ্ছা, আমি এখনই আসতেছি।
- আর শোন, আসার সময় একটা কিটক্যাট নিয়ে আসিস।
- কিটক্যাট!!!
- আরেহ বলার টাইম নাই। খুব জরুরী। তাড়াতাড়ি আয়। কিন্তু কিটক্যাট ছাড়া আসিস না। খুব আর্জেন্ট।

পরে গেলাম চিন্তায়। খুব জরুরী। আবার কিটক্যাট লাগবে। কথার এক্সপ্রেশনে বুঝলাম আসলেই খুব সিরিয়াস কিছু হবে। অত রাতে কিটক্যাট কই পাই। অনেক খুঁজে প্রায় ৩০ মিনিট ঘোরাঘুরির পর একটা দোকানে দেখলাম দোকানদার আছে। তবে দোকান বন্ধ। মানে রাতে এখানেই ঘুমাচ্ছে। তাকে কত জোর করে ডেকে তুলে ৩০০ টাকা দিয়ে একটা  কিটক্যাট নিয়ে, নিজের মান-ইজ্জতের কথা না ভেবে চোরের মত চলে গেলাম গার্লহোস্টেলে। এর মাঝে যে কতগুলা কল দিছে ও তার হিসাব নাই। প্রতিবার রিসিভ করে সান্তনা দিছি যে, আমি প্রায় চলে আসছি। গার্লস হোস্টেলে যেয়ে চোরের মত ওকে খুঁজে বের করে কিটক্যাট দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি হইছে।
- আরেহ দোস্ত আসলে খুন কিটক্যাট খাইতে ইচ্ছা করতেছিলো তো তাই কইছিলাম আর কি। কিটক্যাটের জন্য ধন্যবাদ। ওহ, তুই তো আবার থ্যাংকস আর সতি পছন্দ করিস না। যাহ, কিছুই দিমু না।

মেজাজ টা যে এত খারাপ হইতেছিলো। মন চাইতেছিলো ওরে আছার মারি। এই ৪ তলায় উঠছি সিরি ছাড়া। পুরাই চোরের মত। চিল্লাচিল্লি শুরু করার আগেই ও বলা শুরু করলো,
- এটা গার্লস হোস্টেল। কেউ যদি জানে তুই এইখানে, কি হবে জানিস তো?

চুপচাপ চলে এলাম। যদিও পরেরদিন ইচ্ছা মত কিল আর ঘুসি দিয়ে সব উশুল করে নিছিলাম।

এভাবে ছিলাম তো ভালই সুখে। তবে কথায় আছে না, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। আমারো তেমন দশা হলো। আবার পাখনা গজাইলো। জিএফ বানানোর চিন্তা মাথায় ঢুকলো। কিন্তু জিএফ পাই কই?

এভাবে আবার দিন যেতে লাগলো। একদিন বিকালে ভাবলাম বাইরে থেকে ঘুরে আসি। বাইরে ঘুরতে যেয়ে দেখা হয়ে গেল এক পরীর সাথে। ওয়াও। আসলেই পরীর মত দেখতে।

এইতো পেয়ে গেলাম। এবার থেকে এর পিছেই ঘুরতে থাকি। এভাবে ১ মাস ঘুরঘুর করার পর গ্রিন সিগনাল পেয়ে গেলাম। সুযোগ বুঝে একদিন বিকাল বেলা পাঞ্জাবী পরে, সানগ্লাস চোখে দিয়ে হাতে গোলাপ নিয়ে চলে গেলাম প্রপোজ করতে।

সবকিছু পার্ফেক্ট পজিশনে আছে। প্রপোজ করবো ঠিক এমন টাইমে পিছন থেকে শুনতে পেলাম,
- এইতো বাবু পেয়ে গেছি তোমাকে। আজ না আমার সাথে তোমার ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল? জরুরী কাজের কথা বলে এখানে এসেছো। এই তোমার জরুরী কাজ!
আর এই মেয়েটা কে?  তোমার ছোট বোন নাকি?

আমি সত্যিই কি বলবো বুঝতেই পারছি না। কারন এটা তো অনু। এটাও ভালো মত বুঝতে পারছিলাম যে আমারও ব্রেকআপ করানোর জন্যই ও এখানে হাজির হয়েছে।

- দেখ অনু ফান করিস না। সব সময় ফান চলে না। আর এটা আমার ফিউচার ওয়াইফ। (আমি  বললাম)
- এসব কি বলছো বাবু!!! তুমি আমাকে তুই করে বলছো কেন!!! আর এটা তোমার ফিউচার ওয়াইফ হলে আমি কে!!!!  আমাকেও তুমি বলেছিলে আমিই তোমার ফিউচার ওয়াইফ। আর আজই অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে....... ছিঃ ছিঃ ছিঃ.... আমি তোমার থেকে এটা আশা করি নি কখনো। ভালো থেকো।

এটা বলেই ও তো চলে গেল। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম সেই মেয়েটাকে। কিন্তু নিজ চোখে সামনে থেকে রিলেশন শুরুর আগেই এমন দৃশ্য দেখে পাগলেও আগাবে না। অতঃপর এটাও গেল।

ফিরে এসেই অনুর সাথে ঝগড়া। কিন্তু লাভ নাই। এসব ওর গায়ই লাগে না।

কয়েকদিন পর আবার আরেকটা খুঁজে বের করলাম। এটাকে প্রপোজ করার দিনেও অনু এসে হাজির। এবার আবার আগের মত কিছু কথা বলার পর আমি বললাম,
- আপনি কে আপু? 😲
আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি সে না যাকে আপনি ভাবছেন।
- ওই তুমি, অনিক না? তুমি ###### ইউনিভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ারে পড় না? তোমার বাসা রাজবাড়িতে না?
- অনু তুই আবার শুরু হইছিস। যা তো। ভালো লাগে না। (রেগে বললাম)
- ও। তার মানে এই আপু ঠিকই বলছে। আসলেই আগে এই আপুর সাথে আপনার রিলেশন ছিল। তাই না? (নতুন মেয়েটা)
- রিলেশন ছিল মানে কি! ও তো আজ সকালেও আমার হাত ধরে হেটেছে আর বলেছে বিয়ে করলে আমাকেই করবে। (অনু)

আমার আর কি বলার আছে। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ হল না। হওয়ার কথাও না। অতঃপর আবারো রিলেশন শুরুর আগেই ব্রেকআপ। 😖😖😖
.
এবারে ফিরে এসে প্লান করতে লাগলাম কি করা যায়। এভাবে আমি কোন দিনও প্রেম করতে পারবো না। অনেক খুজে ভালো একটা উপায় পেয়ে গেলাম।

অতঃপর কয়েকদিন পর আবার আরেকটা মেয়েকে পেয়ে গেলাম। এবারের টা এতই কিউট যে, আগের সবগুলাকে হার মানাবে। আমি তো প্রথমবারেই 😍
.
এবার ধীরে ধীরে আগাতে থাকলাম। কিছুদিন পর মেয়েটাকে বললাম, আমার একটা ফ্রেন্ড আছে, নাম অনু। সে সবাইকে ব্রেকআপ করিয়ে বেড়ায়। ব্লা ব্লা ব্লা.....
এসব আগেই বলে ওর ব্রেন ওয়াস করে দিছি। আর কোন টেনশন নাই। এবার তো আমি নিজেই অনুকে জানিয়ে দিলাম যে কাল প্রপোজ করতে যাবো।

টাইম মত পৌছেও গেলাম। আনুও চলে এসেছে। আপ্রাণ চেষ্টাও করলো। কিন্তু লাভ হলো না। 😂
বেচারি মন খারাপ করে চলে গেল। সত্যি আমি এই প্রথম ওকে মন খারাপ করতে দেখলাম। বাট, তাতে কি! আমি আমার মত মনের আনন্দে ঘুরলাম নতুন জিএফ এর সাথে। নতুন জিএফ এর নাম হল, শায়লা।

এভাবে চলতে লাগলো। ৩-৪ দিন পর বুঝতে পারলাম। কিছু একটা মিসিং। ভেবে ভেবে বের করলাম, এই ৩-৪ দিন অনুর কোন খোজ নাই। নরমালি তো প্রতিদিন কম করে ১ বার হলেও কল দিতো। আর আমাদের তো রেগুলারই দেখা হত। তবে এই ৩-৪ দিন এরকম কিছু হয় নি। অনুও ক্লাসে আসেনি।

আমি অনুকে কল দিলাম। নম্বার অফ। কেমন যেন একটা যন্ত্রনা অনুভব করলাম। তখনই চলে গেলাম অনুর রুম মেটের কাছে। তার কাছে জানতে পারলাম, অনু নাকি ৩ দিন আগেই বাড়ি চলে গেছে।
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

একটি ছ্যাকা খাওয়ার গল্প

চিঠি=বাঁশ (২য় পর্ব)

ব্রেকআপ অনু (পর্ব-১)