চিঠি=বাঁশ (৪র্থ পর্ব)



চলে তো আসলাম। কিন্তু আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছিলাম যে, বিষয় টা কারো সাথে শেয়ার করে তারপর বুদ্ধি করে এই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে হবে। এ ছাড়া সম্ভব না। কিন্তু কিভাবে?
অনেক চিন্তার পর দেখলাম, রাইসার সম্পর্কে আমার চেনাজানা মানুষগুলার মধ্যে তিশা সব থেকে ভাল জানে। তাই তিশার থেকে বুদ্ধি নিলে সব থেকে ভাল হবে। আর সফল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। কিন্তু কিভাবে বলবো তিশাকে?  কিভাবে ?  কিভাবে? কিভাবে?
.
সব শেষে মন স্থির করলাম, আর ঠিক করলাম আজ রাতেই তিশাকে সব বলবো। তাতে যা হয় হবে। বোকা মেয়েটার সাথে আর আমি নাটক করতে পারছি না। নিজের বিবেকে বাধা দিচ্ছে। কারন আমিও তো ওকে মন থেকেই ভালবাসি।
.
কল দিলাম তিশাকে।
- হ্যালো (তিশা)
- কেমন আছো?
- ভাল। আপনি কেমন আছেন?
- আমিও ভাল আছি।
- আজ আপনাকে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে। কি ব্যাপার?
- আসলে তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।
- আচ্ছা, বলেন।
- না। আসলে সামনা-সমনি বলতে হবে। একটু দেখা করতে পারবা?
- সিরিয়াস কোন বিষয়?
- হুম।
- আচ্ছা, কখন আর কোথায় দেখা করতে হবে?
.
এভাবে আমরা জায়গা এবং টাম ফিক্সড করে বিকালেই দেখা কর‍তে গেলাম।
.
বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিট। আমি আর তিশা সামনাসামনি বসে আছি। তিশা আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি বার বারই চেষ্টা করছি বলতে, কিন্তু পারছি না। এবার তিশা বলে উঠলো,
- প্লিজ কি হয়েছে খুলে বলেন। কোন ভয় নাই। আমি আছি তো।
.
কথাটা শুনে মনে অনেক সাহস পেলাম। তাই আর দেরি না করে সব ঘটনা খুলে বললাম তিশাকে। আমার মুখে এসব শুনে তিশা যেন বোবার মত হয়ে গেল। একটা কথাও বলছে না। সব বলা শেষে আমি বললাম,
- দেখো আমি সত্যি এসব চাইনি। সব কিছু শুধু শান্তর দুষ্টমির ফল। এখন আমি আর এভাবে চলতে পারছি না। কারন আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি, এখনো বাসি আর সব সময় শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো।
- থাকেন আপনি আপনার ভালোবাসা নিয়ে। আমি যাচ্ছি। বাই। সব কিছু বলবো আপুকে। তারপর দেখেন আপনার কি অবস্থা হয়।  😡😡
- জান। প্লিজ। না জান। এই কাজ কইরো না। প্লিজ। 😭😭
.
আমার কথাগুলো শুনেছে কিনা জানি না। কারন ও ওর কথা শেষ করেই হাটা শুরু করে দিয়েছে। আমি আর কি করবো, বাসায়ই চলে আসলাম। জানি কপালে খুব দুঃখ আছে কাল। মনে মনে, শান্তর তো গুষ্টি উদ্ধার করতেছি। কিন্তু কি যে করবো ভেবেই পাচ্ছি না। মনে মনে ভাবছিলাম, "আগে ভাবছিলাম এক বোন পাগল এখন তো দেখি ২ বোনই পাগল। কিন্ত আমি এখন কি করবো। আমি শেষ।"
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। আমার হার্টবিট হাই। ভয়ে ভয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি তিশা। এবার তো আমার অবস্থা আরো খারাপ। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাও কল রিসিভ করলাম।
- হ্যা-এ্যা-লো। (আমি-খুব ভয়ে ভয়ে)
- কি করছেন এখন?  (রেগে রেগে)
- এইতো কিছু না। বসে আছি। তুমি?
- আপনার সাথে রসের কথা বলতে কল দেই নাই।
- ওহ।
- কি ওহ!!!!  ফাজলামি করেন?!!!????
- না। আমি তো
- থাক। হইছে। কিছু ভাবছেন, কি করবেন?  (আমাকে থামিয়ে বলল)
- কোন বিষয়ে?
- আপনি তো ....... (খুব রেগে,  এটুকু বলেই থেমে গেল)
- ওহ। বুঝছি। ওই ব্যাপারে?  হ্যা, ভাবছি। কিন্তু এতে তোমার হেল্প দরকার।
- ওকে। কি ভাবছেন, বলেন।
- কেন? এটাও কি রাইসাকে বলে দিবা?
- সাটআপ। যেটা বলছি সেটা করেন। আর একটা বাজে কথা বললে, সত্যিই আপুকে বলে দিবো। (খুব রেগে)
- নাহ, মানে। আসলে, ভেবে দেখলাম যদি রাইসার একটা বিএফ খুজে দেওয়া যায় তাহলে  আমি মুক্তি পেয়ে যাবো।
- মাথা কি পুরাই খারাপ হইছে আপনার? 
- আরে নাহ। আমি সব প্লান করেই রাখছি। এমনভাবে প্লান করছি, যেটা রাইসার মত পিচ্চির কাজ না বোঝা। 😁😁
- যা করবেন বুঝে শুনে করবেন। একটু ভুল মানেই বুঝছেনই তো। যাই হোক, তো আপুর বিএফ টা হবে কে?
- কেন, আমাদের ক্যামেরাম্যান আছে না?
- ক্যামেরাম্যান কে?
- কে আবার?  আমার ফ্রেন্ড সরন। যে আমার চিঠি শান্তকে দেওয়া ভিডিও করছিল। ওর ও তো জিএফ এর খুব শখ। আগে ওর শখ পূরন করে নেই।
.
এরপর আমরা প্লান করলাম, কিভাবে কি করবো।
এভাবেই এই দিনটাও কেটে গেল।
.
রাতে মোবইল টিপাটিপি করছিলাম। হঠাৎ দেখি রাইসা আমার সামনে দাঁড়ানো। ওকে দেখেই জিজ্ঞাসা করলাম,
.
- আরে তুমি এখানে কিভাবে!!!!!!!  কেউ দেখে নাই তো?
- তুমি আমার সাথে চিটিং করছো। তাই না?
- কিসের চিটিং!!!!!  আগে বলো, আম্মু দেখছে নাকি তোমাকে?
- তুমি আমার সাথে এতদিন ভালোবাসার অভিনয় করছো। তাই না?
- কই, না তো।
.
(মনে মনে বলতেছি, আমি শেষ। বাঁশ বুঝি গেল বড় মাপের একটা)
.
- একদম মিথ্যা কথা বলবা না। তুমি ভালোবাসো তিশাকে। তাই না? ও তো আমারই ছোট বোন।  ওর থেকে আমি কোনদিকে কম?
- নাহ। দেখো, আসলে আমি ওকে আগে থেকেই ভালোবাসতাম। তুমি তো নিজেই উল্টা পাল্টা বুঝে এইসব করছো। আমাকে বলার সুযোগটাও দাও নাই। শান্তর কথাই বিশ্বাস করছো। আমার কথার কোন দাম দাও নাই। আমার আর কি করার ছিল এই অবস্থায়।  তুমিই বলো?
- হুম। আসলেই। সব ভুল আমার।
.
মনে মনে, ভাবছিলাম, "বাহ ভালই তো। ঝামেলা নিজে নিজেই সমাধান হচ্ছে। রাইসা ব্যাপারটা তাহলে বুঝতে পারছে। আল্লাহ বাঁচাইছে।" এর মাঝে ও আবার বলে উঠলো,
.
- ভুল যখন আমার, তাহলে সমাধানও আমার করা উচিত। তাই না?
- হ্যা, অবশ্যই। (৩২ দাঁত বের করে)
.
এর মাঝে দেখি ও হাতে ইয়া বড় একটা বটি নিয়ে দাঁড়িয়ে। যদিও এতক্ষণ এটা দেখি নাই। আমার তো বোঝার আর বাকি নাই যে, এবার কি হবে। দিলাম এক দৌড়। রাইসা আমার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে আর বলছে, "ওই কোথায় যাও?  দাড়াও। সব সমাধান করবো। তুমি আমার না মানে, তুমি কারো না। সে হোক আমার বোন আর হোক অন্য কোন মেয়ে। দাড়াও।" এইসব বলতে বলতে বলতে আমাকে ধরেও ফেলল। আমাকে বেধেও ফেলেছে। আমি খুব কাকুতিমিনতি করছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এবার উপায় না পেয়ে বাঁচার জন্য "বাঁচাও, কেউ বাঁচাও। আমাকে মেরে ফেলল, কেউ বাঁচাও" এসব বলে চিৎকার করতে থাকলাম। ২-৩ বার চিৎকার দেওয়ার পরই বুঝলাম কেউ আমার গায় পানি ঢেলে দিয়েছে। তাকিয়ে দেখি আম্মু!!!!!!! আম্মু আমাকে জিজ্ঞাসা করছে,
- কিরে, কি হইছে? ভয়ের স্বপ্ন দেখছিস নাকি?
- না না। কিছু না।
- বল কি হইছে?
- আরেহ, কিছুই না। এমনি কি না কি দেখছি। মনে নাই।
.
এইসব কোনরকমে বুঝিয়ে আম্মুকে রুম থেকে বের করে দিলাম। বুঝলাম এটা সম্পুর্নই একটা স্বপ্ন। এতক্ষণে একটু নিশ্চিত হলাম। যে ভয় পেয়েছিলাম, ভাগ্য ভাল যে এটা শুধুই একটা স্বপ্ন। কিন্তু তবুও সম্পুর্ন বাসা ভালো করে খুজে দেখলাম কেউ আছে কিনা। তারপর আবার ঘুমাতে গেলাম।
.
পরেরদিন, গেলাম কলেজে। হঠাত মনে হল, যা প্লান করছি সেটা সফল হতেও পারে নাও হতে পারে। আবার তাতে টাইমও অনেক দরকার। আবার অনেক কষ্টও করতে হবে। এত ঝামেলা না করে সহজভাবে সমাধান করি। তাই আমি আমার সহজ প্লান নিজে নিজেই সফল করার চেষ্টা শুরু করে দিলাম।
.
রাইসার সাথে দেখা হল,
- কি অবস্থা জান। কেমন আছো? (আমি)
- আজ তোমাকে একটু চেঞ্জ চেঞ্জ লাগছে। ব্যাপার? (অবাক চোখে)
- কই, না তো।আছো কেমন সেটা বলো।
- ভাল। তুমি কেমন আছো?
- ভালই।
.
এরপর কি খাইছে, কি করছে এইসব আজাইরা প্যাঁচাল শেষ করে বললাম,
.
- একটা কথা বলি?
- হুম বলো।
- তুমি রাগ করবা না তো?
- নাহ। বলো।
- আমাকে মারবা না তো?
- আর নাহ পাগল। বলো।
- একটু কাছে আসো না। প্লিজ
- কি?  (বড় বড় অবাক চোখে)
- প্লিজ। একটু কাছে আসো না।
- কেন!!!! 
- এমনি। প্লিজ।
- কেন?  কি করবা?
- আরে, ধুর। কিছুই করবো না। আসো না প্লিজ।
- আসছি। (একটু কাছে এসে। পাশাপাশি বসে আছি)
- আরেকটু কাছে আসো।
- এ্যা।  আরো কাছে?
- হ্যা। প্লিজ। তোমাকে একটা জিনিস দিবো।
- কি দিবা?
- যা দেই, দিবো। আগে আরো কাছে আসো।
- দেখো, এটা কলেজ। কেউ দেখলে কি হবে ভাবছো একবার?
- আরে সমস্যা নাই। কেউ দেখবে না। এখানে এখন কেউ নাই। আসো না প্লিজ।
.
ও আরো কাছে আসলো। এভাবে একদম কাছে যখন এসে পরেছে, তখন অবস্থান টা এমন যে যদি ২ জনের মধ্যে কেউ একটু নড়ে বসতে চায় তাও ২ জনের গায়ে টাচ লাগবে। এখন আম ওকে বললাম,
.
- এবার চোখ টা বন্ধ করো।
- দেখো, এখানে না। প্লিজ।
- নাহ। এখানেই। প্লিজ চোখ টা বন্ধ করো। প্লিজ। ১ সেকেন্ড মাত্র। কেউ বুঝবে না। প্লিজ
- ওকে। এই যে করছি।
- আর হ্যা। এদিকে সিডর হয়ে গেলেও আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবা না।
- কেন?
- আমাকে বিশ্বাস করো?
- হ্যা, করি।
- তাহলে এটাও করো।
- ওকে।
.
ও চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই আমি ওর মাথা থেকে এক টান দিয়ে ১ টা চুল ছিঁড়ে নিয়েই পকেটে ভরে ফেললাম।
চুল ছেঁড়ার সাথে সাথেই রাইসা "উহ" বলেই এক চিৎকার দিয়ে চোখ খুলে ফেলল।
.
- এটা কি করলা তুমি? (অনেক রেগে)
- পরীক্ষা করে দেখলাম। তুমি আমাকে কতটা বিশ্বাস করো  কতটা ভালোবাসো।
- কি বুঝছো?
- বুঝলাম, তুমি পরীক্ষায় ফেল করছো। জিরো পাইছো, ডাবল জিরো।
- কেন?!!!!!!
- চোখ খুলছো কেন?  মানা করছিলাম তো। তাই না?
- আর হবে না প্লিজ। আবার পরীক্ষা নাও।
- নো নেভার। বাই। পরে কথা হবে। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ক্লাসে চলো।
.
(আমার কাজও হলো, আবার প্রতিশোধও নেওয়া হয়ে গেল। একদিন ও-ও আমাকে এই কথা বলছিল।)
.
আমি উঠে ক্লাসে চলে গেলাম। আমি যাওয়ার পর পরই স্যার চলে আসলেন ক্লাসে। যেহেতু অনেক পরে ক্লাসে ঢুকলাম, তাই শেষেরদিকেই বসতে হয়েছিল।
.
ক্লাস শুরু হল। ক্লাস এত বোরিং ছিল যে খুব ঘুম আসছিল। কিন্তু ঘুমানোর কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।
.
একটু পর দেখি, রাইসা ওর সিট থেকে উঠে এসে আমার পাশে বসে পরলো। আমি বললাম,
- এটা কি করতেছো তুমি? তুমি জানো না আমাদের কলেজে ছেলে মেয়ে একসাথে এক বেঞ্চে বসা নিষিদ্ধ?
- তাতে আমার কি?
- স্যার দেখে ফেললে কিন্তু অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।
- কিচ্ছু হবে না। তোমার সাথে আমার বোঝাপড়া আছে। আমার চুল ছিঁড়ছো না তুমি? আমি এটার শাস্তি দিবো তোমাকে।
.
এই বলেই কাতুকুতু দেওয়া শুরু করে দিল। হায় হায়!!!! কি সর্বনাশ!!! আমি তো শেষ। কাতুকুতু আমার একদম সহ্য হয় না। আমি জোরে জোরে হাসতে হাসতে চিৎকার করেই বলতে লাগলাম, "সরি, আর হবে না। ভুল হয়ে গেছে। এবারের মত ছেড়ে দাও আমাকে।"
.
এর মাঝেই মনে হল "ঠাস" করে কেউ আমাকে থাপ্পড় মারলো। চোখ খুলে দেখি স্যার আমার দিকে লাল লাল রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম, আমি ক্লাসে ঘুমাইয়া পরছিলাম। খাইলাম তো সেই একটা বাঁশ। ক্লাস শেষে বাসায় চলে আসলাম।
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

একটি ছ্যাকা খাওয়ার গল্প

চিঠি=বাঁশ (২য় পর্ব)

ব্রেকআপ অনু (পর্ব-১)