নীল চোখ (৪র্থ পর্ব) [শেষ পর্ব]
কল কেটে গেল। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে থাকলাম। সব আনন্দ সব স্বপ্ন এক নিমিষেই নাই হয়ে গেল। এরকম কিছু কখনই আশা করিনি আমি।
অন্তত ১০ মিনিট এভাবেই বসে আছি। এরপর চিন্তা করলাম, ও ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকবো। ও যা চায় তাই ই হবে। তবুও লাস্টবার কথা বলতে চাই।
কল দিলাম। কিন্তু নাম্বার বন্ধ।
সারারাত একটুও ঘুম হয়নি। জেগেই আছি।
সকাল ১০ টা,
আম্মু এসে ডাক দিল,
- অনিক, দেখ ১২ টা বাজে ওঠ এবার।
- উঠছি
- বিয়ে নিয়ে কি ভাবলি?
- আমি বিয়েতে রাজি। আপনারা দিনতারিখ ঠিক করেন। আর ডেট টা যত আগে দেওয়া যায় ততই ভাল।
।
এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, আমাকে রিল্যাক্স হতে হবে। যেভাবেই হোক নরমাল হতে হবে।
।
মোটামুটি ৪ দিন লাগলো নরমাল হতে। এর মাঝে মোবাইল সম্পূর্ণ অফ রাখলাম। ৫ম দিন মোবাইল অন করলাম। কিছুক্ষণ পর একটা আননন নাম্বার থেকে কল।
- হ্যালো
- কেমন আছেন?
- কে? আমি ঠিক চিনতে পারলাম না।
- আমি আপনার হবু বউ।
- ওহ। আপনি। হ্যা, ভাল আছি। আপনি?
- আমিও ভাল আছি। এখন থেকে আপনি করে না বললেও হবে। আপনি আমাকে তুমি করে বললেই আমি বেশি খুশি হব।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আর মনে হচ্ছে আপনি বিয়েতে একটু বেশিই আগ্রহী।
- কেন?
- না মানে, এত তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেট ফিক্স হল। তাই আর কি
- ডেট কবে?
- হাহাহাহাহা। বিয়ে আপনার আর নিজেই জানেন না!!! আপনিই তো লিজেন্ড। যাই হোক, আর ৬ দিন পর আমাদের বিয়ে রেডি থাইকেন।
- হ্যা। বউ পিটানোর জন্য রেডিই আছি।
- বউ পিটানোর জন্য না, বউয়ের পিটানি খাওয়ার জন্য 😹
- দেখা যাবে।
- যাই হোক, আপনার জিএফ কি কল দিছিল? নাকি আর ধৈর্য নাই।
- হ্যা। দিছিল।
- তাহলে আপনি বিয়েতে রাজি কেন হয়ে গেলেন? 😱
- এমনি।
- হেহেহেহেহ। তাহলে নিশ্চিত সে আপনাকে বিয়ের দাওয়াতই দিছে। 😹
আগেই বলছিলাম। মেয়ে মানুষ সম্পর্কে আপনার ধারনা কম। দিলো ডাবল ছ্যাকা 😹
- মোটেই না। ও নিরুপায় ছিল। ওর যায়গায় তুমি থাকলেও এটাই করতে হয়ত। যাই হোক, বাদ দাও। এসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
।
এই বলে কল কেটে মোবাইল অফ করে রাখলাম।
এভাবে মাঝে মাঝে কথা হয় নীলিমার সাথে।
।
আজ আমার বিয়ে। বিয়ে করতে এত প্যারা আগে জানা ছিল না। সারাদিনের ঝামেলায় পুরাপুরি ক্লান্ত।
।
রাতে আসলাম রুমে। নীলিমা বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে বিছানায়। আসলে এখন আমার মোটেই ভাল লাগছে না। আর নীলার কথা টা বার বার মনে পড়ছে। একটু বেশিই মনে পড়ছে।
।
মনে মনে প্ল্যান করলাম, নীলিমার ওপর একটু রাগ দেখিয়ে ইচ্ছা মত বকাঝকা করে ঘুমিয়ে যাব।
।
প্ল্যান কাজে লাগানোর জন্য ওর মেকাপ নিয়ে কথা শুরু করলাম। তবে শুরু করার আগে ওর ঘোমটা ওঠিয়ে বললাম,
- বাজারে আর আটা ছিল না মনে হয়। তাই না?
- হোয়াট!
- আর চোখে লেন্স লাগাইছ। হেহ বিড়াল মার্কা চোখ। ছিঃ একদম বাজে লাগে। যাও এখনি সব মেকাপ আর লেন্স খুলে আসো।
- চোখে লেন্স নাই। হুহ
- লেন্স কি তুমি নিজেই খুলবা নাকি আমাকে খুলতে হবে?
- আমিই খুলতেছি। হুহ।
- যাও
।
ও ওয়াসরুমে গেল ফ্রেস হতে। আমি শুয়ে আছি। মনটা অনেক খারাপ।
ও বের হল। আমি তাকালাম। এবং খুবই অবাক হলাম। নীল চোখ!!!! তাহলে লেন্স কেন পরত!
আমি বললাম,
- আবার আরেকটা লেন্স লাগিয়ে আসছ।
- ভাল করছি। হুহ
।
আমি একটু অবাকই হয়ে গেলাম। আমার মনে পরলো আম্মুর দেওয়া সেই ছবিটার কথা। তাড়াতাড়ি উঠে সেটা বের করে দেখে সেখানেও চোখ নীল!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
- তোমার চোখ কি আসলেই নীল!!!!
- হ্যা 😏
।
একটু ভাল করে খেয়াল করতে যেয়ে আমি আরো বেশি অবাক। এ তো একদম নীলার চোখের মত চোখ! আমি তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে।
এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও হেসেই দিলো।
এবার আমি বলতে শুরু করলাম,
- নীলিমা, একটু সাবধানে ঘুমাইয়ো। আমার বিছানার নিচে ইদুরের বাসা আছে। সেখানে ৪ টা এত্ত বড় বড় ইঁদুর থাকে। আর বাসা টা একদম তুমি যেখানে শুতে যাচ্ছ ঠিক ওইখানেই।
- হুহ। আমি ইদুর ভয় পাই না। (কন্ঠে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট)
- তাছাড়া আমার রুমে পিঁপড়ারও অভাব নেই। লাল পিঁপড়া সব। কি যে ভয়ংকর একেকটা 😱। আর মারাত্মক ব্যাপার হল, কেউ এই রুমে ঘুমালেই তার নাকে চলে যায় এই পিঁপড়াগুলো।
- দেখেন, আআআমি এসবে ভয় পাই না। পিপড়া তো ছোট প্রানী এটা আর কি করবে। হুহ। আমি ভয় পাই না। আর আমাকে এইভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা ঠিক না। (ভয়ে অবস্থা খারাপ তা কন্ঠে একদম স্পষ্ট)
- তাছাড়া তুমি তো জানই আমার পোষা ভূতও আছে। আর সেই ভূত এই রুমেই থাকে। বুঝছ, ভূত টা অনেক কিউট। দেখবা সেদিন তো দেখানো হয়নি তোমাকে। আজ দেখবা?
- দেখেন একদম মিথ্যা বলবেন না। আপনি কোন ভূত পোষেন না। আমি জানি।
- কেন, সেদিনও তো বলছিলাম। মনে নাই তোমার? 😁
- কিন্তু তারপর তো এটাও বলছিলেন যে, যা যা বলছেন সব মিথ্যা। আপনি আমার সাথে মজা করছেন। বলেন বলেন নাই?
- কিন্তু কেন বলছিলাম? 😹
- আমার কান্না থামানোর জন্য। নাহলে সেদিন আমি থামতামই না। আর ব্রেকাপ তো কনফর্ম ছিল। 😖
- আহারে 😹🔫 😆🔫
তাহলে, নীলা বাকি ঘটনা কি তুমি নিজের ইচ্ছায়ই বলবা নাকি আমার ভূত জোর করে শুনবে তোমার থেকে? 😹
- বলতেছি, বলতেছি 😖
সেদিন আপনি চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে যাওয়ার আগে কথা বলছিল না? ওইসময় আমি খেয়াল করছিলাম না আব্বু আমার পিছে দাঁড়িয়ে ছিল। সব কথা শুনে ফেলছিল। এরপর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমার মোবাইল নিয়ে যায়। আর বাসা থেকে বের হতে দিত না। কার সাথে কোন কথাও বলতে দিত না। রুমে আটকে রাখছিল। আমার কাজিনদের সাথেও কথা বলতে দেয় নাই। এরপর আপনারা দেখতে আসার আগে আব্বু জোর করে আমাকে বিয়েতে এবং আপনাদের সামনে আসার জন্য রাজি করায়। আমি রাজি না হলে আব্বু সুইসাইড করবে এমন কথা বলে। তাই আমার হাতে আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু যখন আপনাকে দেখলাম আর জানলাম যে বিয়েটা আপনার সাথেই তখন যে কি আনন্দ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল নাচি। কিন্তু ভাবলাম আপনাকে একটু পরীক্ষা করা দরকার। মাত্র ২ মাসেই আমাকে ভুলে মেয়ে দেখতে চলে আসছেন। তাই কাজিনের থেকে লেন্স নিয়ে সেটা চোখে পরে সামনে আসছিলাম। আর যখন আমাদের আলাদা কথা বলতে দিল তখন কন্ঠ একটু চেঞ্জ করে কথা বলেছি যেন আপনি ধরতে না পারেন।
- তাহলে রাতে কল দিয়ে ওই কথাগুল বলার কি দরকার ছিল?
- আসলে আমার অতদিন অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছিল না। তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি হওয়ার জন্যই ওই কাজ করে ছিলাম। এবং আমার বুদ্ধিটা কাজেও লেগেছে। হুহ 😁
- যদি সেদিন ওই কথার পর আমি সুইসাইড করতাম?
- এক ঘুসি দিয়ে নাক ভেঙে ফেলতাম আপনার 😡
।
এটা বলেই বুকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কি যে কান্না শুরু করলো। হায়রে, এই কান্না থামাতে আবার জীবন শেষ।
।
এসবকিছুর পর সত্যিই আমি মাথায় পার্মানেন্টলি সেভ করে নিলাম যে, ও মানুষ না। ও মেয়ে মানুষ। 🙊
তবে আসল কথা হল, ভাগ্যিস আমার একটা পোষা ভূত ছিল। 😹🔫
.
(সমাপ্ত)
Comments
Post a Comment