চিঠি=বাঁশ (৬ষ্ঠ পর্ব)
সকাল সকাল চলে গেলাম তিশার সাথে দেখা করতে। আমি তো রেগুলারই আধা ঘন্টা লেট করি, এই আধা ঘন্টা রেগুলার তিশা আমার জন্যে ওয়েট করে। আর দেখা হওয়ার পর রাগারাগি করে। আজ একটু আগেই বের হইছি যেন লেট না হয়। প্রায় চলেই আসছি এমন টাইমে মনে পরলো, আমি তো ফুল আনতে ভুলে গেছি। হায় হায়!!!!
আবার বাসায় আসবে কে? এদিকে আমার গাছের ফুল ওর খুব পছন্দ। কেনা ফুল নিয়ে গেলে তো খুব রাগ করবে। কারন ও অপচয় পছন্দ করে না।
.
তাতে কি? কেনা ছাড়া উপায় নাই। আজ নাহয় মিথ্যা বলে দিবো। 😜
.
ফুল নিয়ে যেতে যেতে ঠিক ৩৭ মিনিট লেট। আজ এত আগে বের হয়েও এত লেট কিভাবে হল বুঝলাম না। কপালটাই খারাপ। আমাকে দেখে তিশা রাগে চোখ লাল করে আমাকে বলছে,
- আজও লেট?!!!
- নাহ আসলে ইচ্ছা করে করিনি।
- আপনি প্রতিদিনই অনিচ্ছাকৃত ভাবেই লেট করেন।
- না মানে,
- আচ্ছা, আপনার জন্মদিনও কি লেটে নাকি?
- ওয়াও!!!! তুমি কিভাবে জানো। আমি সত্যিই ১০ মাস ১১ দিনে হইছি। 😲😲
- What!!!!!
- হ্যা। আম্মু এটাই বলে। 😁😁
- আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না। হুহ
- উহু। হবে। একটা কাজ হবে। দেখবা?
- কি?
.
এবার এক হাটু গেড়ে ফুলের তোড়া বের করে ওকে প্রপোজ করলাম। আমি তো সিওর ও অনেক খুশি হবে। কিন্তু, হল তার উলটা টা। ও রেগে তো আমাকে ঝাড়া শুরু করছে। আসলে রাগার কারন হল, আমি কেন টাকা নষ্ট করলাম। এটাই হচ্ছে আমার অপরাধ। আমার মত কিপটে মানুষের জন্য এইরকম গার্লফ্রেন্ডই ভালো।
.
আসলে ফুলের তোড়া টা আমার কেনা না। দেখলাম এক বড় ভাই এক আপুকে প্রপোজ করে ব্যর্থ হয়ে আমার সামনেই ফেলে দিয়ে চলে গেল। আমি আর শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে কি করবো। এটাই কাজে লাগিয়ে দিলাম। সেটা আর তিশাকে বললাম না। কিন্তু, পরে বুঝলাম এই ফুলের তোড়াটাই Unlucky।
.
সে যাই হোক, তিশার কাছে পুরা ঘটনা শুনতে চাওয়ার সাথে সাথেই ও একটা ডায়রি বের করে দিলো। ডায়রিটা পড়ে আমি পুরাই আকাশ থেকে পড়লাম। এগুলা কখনই মাথায় আসে নাই। সবকিছু আমিও বুঝে গেলাম।
.
মূল ঘটনা হল, ডায়রি টা রাইসার। রাইসা ভালোবাসে সরনকে। রাইসা এই ব্যাপার টা শান্তকে বলছে যেন শান্ত সরনকে রাজি করায়। শান্ত আবার রাইসাকে শর্ত দিছে যে আমাকে বাঁশ দিতে পারলে ও সরনকে পাবে। তাই রাইসা আবার ওর ২ কাজিন আদিল আর মিনহাজ (মানে আমার ২ শত্রু) এর সাথে প্লান করেছে। তারপর সেই প্লান অনুযায়ী সবাই একসাথে আমাকে বাঁশ দিচ্ছে। 😒😒
.
আজ আবার আমাকে বাঁশ দেওয়ার অগ্রিম প্লান করে রাখছে। ভাগ্য ভাল আমি আজ কলেজে যাই নাই।
.
কিন্তু, সারাদিন পর এইডা কিছু হইলো? পুরা মুডাটাই নষ্ট। ডায়রিটা তিশাকে ফেরত দিয়ে দিলাম। এরপর বাসায় এসে আমি প্লান করতে থাকলাম যে ওদের বাঁশ উলটা ওদেরকে কিভাবে দেওয়া যায়।
.
কল দিলাম রাইসাকে,
- ওই কই তুমি? কলেজে আসো নাই কেন? (রাগি রাগি কন্ঠে)
- জানু তোমার কি মনে হয় না যে শান্ত তোমাকে ব্যবহার করছে?
- মানে!!!! (অবাক হয়ে)
- তুমি জানো আমি কি বলতে চাচ্ছি। অভিনয় করে লাভ নেই। তোমাকে একটা অফার দেই, যদি তুমি সবকিছু স্বীকার করে নাও তাহলে কোন কাজ করা ছাড়াই সরনের সাথে আমি কথা বলে ওকে রাজি করিয়ে দিবো।
- না আসলে
- হইছে, আর আমতা আমতা করতে হবে না। রাজি কিনা তাই বলো?
- হ্যা, রাজি।
- ওকে। তাহলে আমি আজ সরনের সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো ।
- ওকে।
.
আমি ওইসময়ই গেলাম সরনের বাসায়।
- দোস্ত, আমি কিন্তু সব জেনে গেছি। (আমি)
- কি জানছিস তুই!!!???
- তুমি মামা মনে মনে রাইসারে ভালবাসো আর আমারে কও ভাল ছেলেদের জিএফ থাকে না। তাই না? (পুরাই আন্দাজে গুলি মারলাম)
- দোস্ত তুই ক্যামনে জানলি?!!!??? 😱😱
- এটা খুব সিক্রেট ব্যাপার। এটা তো বলা যাবে না। (মনে মনে বলি, বাহ ভালই তো)
- দোস্ত কউরে কিছু কইস না। প্লিজ।
- ওকে। আর তুই এটাও জানিস যে রাইসা আমার সাথে জাস্ট অভিনয় করছে। রাইট?
- এইটা ক্যামনে জানলি তুই!!!!!! (চোখ বড় বড় করে)
- আমি সব জানি। আচ্ছা তুই কি ভেবে দেখছিস কখনো, যে রাইসা কেন আমার সাথে অভিনয় করতে রাজি হল?
- না তো। কেন?
- রাইসা তোরে ভালোবাসে। শান্ত শর্ত দিছে যে যদি ও আমার সাথে অভিনয় করে তাহলে তোর সাথে শান্ত এই ব্যাপারে কথা বলবে। তাই শান্তর কথামত ও এসব করছে।
- কি!!!! (এবার মনে হয় বেচারা আকাশ থেকে পরলো)
- হুম।
.
এইভাবে বুঝাইয়া চলে আসলাম। বেচারা সরনের বাঁশ তো কনফর্ম করে আসলাম। মানে, রাইসা যার জিএফ হবে তার আর আলাদাভাবে বাঁশ দিতে হবে না। ও একাই যথেষ্ট। 😂😂😂
.
এবার বাকি আছে শান্ত। আমি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো। রাইসাকে দিয়েই শান্তর বাঁশ দিবো। হা হা হা হা
.
কল দিলাম রাইসাকে,
- হ্যালো
- সরন তো আগে থেকেই তোমাকে ভালোবাসে।
- কি!!!! সত্যি????
- ১১০% সত্যি। কিন্তু এই জিনিসটা কাজে লাগিয়ে শান্ত তোমাকেও ব্যবহার করছে, আবার সরনকেও ব্যবহার করছে। তাহলে এখন শান্তর কি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ?
- নাহ। একদমই না। ওকে তো শাস্তি দিতেই হবে। কিন্তু কিভাবে?
- সেটা নাহয় আমার ওপরই ছেড়ে দাও। শুধু সময়মত আমাকে হেল্প করো। তাতেই হবে।
- ওকে
- আর একটা কথ, আমাকে বাঁশ দেওয়ার তো কতই উপায় ছিল। তোমার কাজিন গুলা কত্ত খারাপ। তা নাহলে এইরকম বুদ্ধি কেউ দেয়? একটা ভাল বুদ্ধিও তো দিতে পারতো। তাহলে ওদের কি এমনি এমনি ছেটে দেওয়া যায় বলো?
- এটাও তো ঠিক কথা। এরকম একটা বুদ্ধি আমাকে দিলো, আর আমি এটাই মেনে নিলাম। ছিঃ। নাহ ওদেরকেও এর শাস্তি দিতেই হবে।
.
এইভাবে রাইসাকে উলটা বুঝিয়ে আমার বশে এনে নিলাম। কাল থেকেই বাঁশ শুরু। আসলে রাগী মেয়েদের মাথায় যে বুদ্ধি কম থাকে এটাই তার প্রমান। হা হা হা হা হা.......
চোরের ১০ দিন, গেরস্তের ১ দিন। হা হা হা হা.......
.
আজ মনটা খুব ভাল। দিনটাও অনেক ভালো কাটলো। আর সবই একমাত্র তিশার জন্য। তাই আমিও আরেকটা জিনিস ভেবে নিলাম। সেটা হল, তিশা তো আমাকে "আপনি" করে বলে, আজ থেকে "তুমি" করে বলাবো। 😁😁
.
রাতে কল দিলাম তিশাকে।
- হ্যালো
- কেমন আছো?
- ভাল। আপনি?
- আমিও ভালই আছি। কি কর?
- কিছু না। আপনার জন্য রুটিন তৈরি করেছি। এই রুটিন অনুযায়ী চলতে হবে আপনাকে।
- কি রুটিন? বলো দেখি
- ঘুম থেকে সকাল ৫ টায় উঠবেন
- কিহ!!!! মাথা নষ্ট তোমার? আমি ৭:৫০ এ উঠি যে কষ্টে। তাও যদি সকালে প্রাইভেট না থাকতো তাহলে জীবনেও উঠতাম না। (ওকে থামিয়ে)
- এখন থেকে উঠতে হবে। এরপর ফ্রেস হয়ে ৫ঃ৩০ এর মধ্যে পড়তে বসবেন। তারপর ৭ঃ৩০ এ প্রাইভেট পড়তে চলে যাবেন। এরপর কলেজে যাবেন। কলেজ থেকে ১ টার মধ্যেই বাসায় এসে গোসল+খাওয়া+ঘুম। বিকাল ৫ টায় উঠে আবার পড়তে বসবেন। সন্ধ্যায় পড়া থেকে ১০ মিনিটের জন্য উঠবেন। ১০ মিনিট পর আবার পড়তে বসবেন। ১০ টা পর্যন্ত পড়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাবেন। বুঝছেন?
- আর আমার মিনি মিলিশিয়া ? মিনি মিলিশিয়া খেলবো কখন?
- একবারও জিজ্ঞাসা করলেন না যে, আমার সাথে কখন কথা বলবেন। অথচ গেমের কথা ঠিকই মনে আছে। হুহ। বাই। আর আমাকে কল দিবেন না।
.
মাইরালা, এইডা কিছু হইলো?
.
- আরে জান, আমি তো টেস্ট করে দেখছিলাম যে তুমি কি বলো। আমি তোমার কথা ভুলতে পারি কখনো? তুমিই বলো?
- হুহ
- জান, আমি না আজ তোমাকে নিয়ে অনেক সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছি। শুনবা? (আজ ঘুমাই-ই নাই, আবার স্বপ্ন। 😂😂😂😂)
- কি স্বপ্ন? (খুব আগ্রহ নিয়ে)
- স্বপ্ন দেখছিলাম, আমি আর তুমি যাচ্ছি একটা অনেক সুন্দর যায়গায়। সেখানে যেয়ে দেখি এত্ত কিউট কিউট মেয়েরা। ওয়াও। আর সব মেয়েগুলা আমার ওপর ক্রাশ খেয়েছে। যেহেতু তুমি সাথে ছিলা তাই আমি কাউকেই কিছু বলি নাই। আমার নাম্বার টা কাগজে লিখে দিয়ে আসছিলাম সবাইকে।
- বাই। আর জীবনেও আমাকে কল দিবেন না। বাই
.
টুট টুুট টুট... অতঃপর কল কেটে গেল। ওকে রাগাতে লহুব ভাল লাগে। তাই তো প্রতিদিন ৩ বেলা ওকে রাগাই। 😂😂
.
আবার কল দিলাম,
- জান, ও জান। জান গো...
- কি হইছে? এত ঢং কতেছেন কেন? কল দিতে না মানা করছি, তাহলে আবার কল দিছেন কেন?
- তোমাকে ছেড়ে আমি কি নিয়ে থাকবো
ভালোবেসে যাবো ওগো যতদিন বাঁচবো
- কপি না করে নিজে কিছু বানিয়ে বলন। হুহ (আমাকে থামিয়ে দিয়ে)
- ও তিশার মা তোমার তিশা কথা শোনে না
কথায় কথায় রাগ করে একটু হাসে না
ও তিশার মা তুমি তিশারে বোঝাও না
আমার ওপর।রাগ করে লাভ হবে না।
- বাই। (খুব রেগে)
- আরে আরে জান, প্লিজ
- কি হইছে? (রেগে)
- কবিতাটা কেমন ছিল?
- হুহ (আগুন হয়ে)
.
টুট টুট টুট.... অতঃপর আবারো কল কেটে দিলো। 😂😂
আর আমি আবার কল দিলাম,
- আবার কল দিছেন কেন? কল দিতে মানা করছি না?
- কই, কল কাটার আগে তো মানা করো নাই।
- আপনি আসলেই অনেক দুষ্টু।
- হে হে হে (মনে মনে বলি, দুষ্টুমির কি দেখছো। এটা তো ট্রেইলার, মুভি তো এখনো বাকি)
- একটা গল্প শোনাবেন?
- আরে ধুর, আমি গল্প পারি নাকি?
- প্লিজ।
- আমি পারি না।
- প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
- সত্যিই পারি না।
- ওকে ফাইন। লাগবে না।
- আরে না। শোনাচ্ছি। তবে একটা শর্ত আছে।
- কি শর্ত?
- এখন থেকে আমাকে আর "আপনি" করে বলতে পারবা না। এখন থেকে তুমি করে বলতে হবে।
- ইশ। কি বলে। আপনি আমার থেকে কত বড় না?
- হুম। তাও তো একটা কথা। আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না। আন্টির বয়স কত জানো?
- জানবো না কেন? আম্মুর বয়স ৩৪ বছর।
- আংকেলের বয়স?
- এইতো, ৩৯ বছর।
- আন্টি আংকেলকে কি বলে ডাকে?
- না মানে, তারা তো বড়।
- এইসব বাহানা বানানো বন্ধ করো। বালিকা, তুমি যে স্কুলে পড় আমি সেই স্কুলের হেডমাস্টার।
- বাহ, তাহলে তো আর পড়াশোনা করার দরকারই নাই। হি হি হি হি
- কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই বেবি। এখন থেকেই শুরু করো। তুমি করে বলো তাহলেই গল্প শোনাবো।
- আজ না। অন্য একদিন থেকে। হুম?
- জ্বী না। এখন থেকেই।
- প্লিজ
- নো প্লিজ।
- ইয়েস প্লিজ
- ওকে। বাই
- আরে আরে। মানে কি? কি হল আপনার?
- কিছু না। হলে তো কান্নার শব্দ পাইতাই।
- হিহিহিহি..... আরে রাগ করার কি হল?
- আমি রাগ করি নাই।
- তাহলে কল কেটে দিতে চাইছো কেন?
- এ্যা!!!! 😲😲
- না মান, তাহলে কল কেটে দিতে চাইছেন কেন?
- আগেরটাই ঠিক ছিল। 😒😒
- প্লিজ।
- এখন থেকে "তুমি" করেই বলবা। প্লিজ। আমার জন্যে। প্লিজ
- ওকে। কিন্তু আমার যে লজ্জা করে।
- হা হা হা ....... পাগলি কোথাকার।
- আচ্ছা, এখন তো একটা গল্প শোনান।
- কি 😒😒
- না মানে, শোনাও
- আচ্ছা শোনো তাহলে,
এক দেশে ছিল এক রাজা। তার রাজ্যে ছিল অনেক কিউট কিউট মেয়ে। একদিন আমি গেলাম সেই রাজ্যে। আমার তো চোখ আটকে গেল। সব মেয়েগুলা এত্ত কিউট, কি আর বলবো।
.
এই পর্যন্ত বলে একটু থামলাম। আমি ওর নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি। কয়েকবার ওর নাম ধরে ডাকও দিলাম। উত্তর নেই। বুঝলাম। ও ঘুমিয়ে গেয়েছে। সত্যিই পাগলি একটা। ভাগ্যভাল আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমার গল্প শুনলে আমাকে খেয়েই ফেলতো। শুধু ফিসফিস করে বললাম "Good Night".......এরপর কল কেটে আমিও ঘুমাতে চলে গেলাম। প্রায় প্রতিদিনই ও আমার সাথে কথা বলতেই ঘুমায়। আমারও অভ্যাসই হয়ে গিয়েছে। তবে একটা ব্যাপার বলতেই হবে ও আমার লাইফে আসার পর, লাইফটা সম্পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে আমার। আম্মু নিজেই বলে, কিছুদিন ধরে নাকি আমার অনেক উন্নতি হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই কি হল কিছু মনে নেই। হয়তো ঘুমিয়েই গিয়েছি।
(চলবে)
Comments
Post a Comment