ব্রেকআপ অনু (পর্ব-১)



- "এই অনু"
বেশ জোরেশোরে এই ডাক শুনে পিছে তাকিয়ে দেখলাম একটু দূরে ২ টা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

- "এই অনু, এদিকে আয়"
আবারো হাত ইশারা করে ডাকলো। এবার তাদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম, আমার নাম অনু এটা এরা কিভাবে জানলো। মানে, আসলে তো এই নামটা আমার ক্লোজ ফ্রেন্ডরা ছাড়া কেউ জানে না। কারন, আসলে আমার নাম অনিক। ফ্রেন্ডরা শর্টকাটে অনু বলে। তবে ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হলাম নতুন। কাউকেই তো চিনি না, এমনকি যারা ডাক দিয়েছে তাদেরকেও চিনি না। তাহলে এরা আমার নাম কিভাবে জানলো?
এসব ভাবতে ভাবতে চলে গেলাম তাদের সামনে। যেয়েই জিজ্ঞাসা করলাম,
- আমার নাম যে অনু এটা আপনারা কিভাবে জানেন? আমাকে চিনলেন কিভাবে আপনারা?
.
তারা ২ জন প্রথম কয়েক সেকেন্ড এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যেন, আকাশ থেকে পড়েছে মাত্র। এর ঠিক কয়েক সেকেন্ডের মাথায়ই হাসির বন্যা বয়ে গেল দুজনের মুখে। এরমাঝে ঠিক আমার পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে তাদের বলল,
- কিরে কি হয়েছে?  আমাকে ডাক দিলি যে। আর এই আবুল আবার কে?
- আর বলিস না অনু, বিশাল কাহিনী। (এটুকুও ভালো মত বলতে পারছে না। এত পরিমান হাসছে তারা)

তবে এ পর্যন্ত শুনেই বুঝে ফেলেছি সব। ওরা ওই ৩য় ব্যক্তিকে ডেকেছিল, যে আমার পিছনেই ছিল। তার নামই অনু। আর আমি ভুল করে ভেবেছি, আমাকে ডেকেছে।

বড় মাপের অপমানিত হলাম। মাথায় তেল নিলেই কি আবুল হয়ে যায় নাকি? মাথায় তেল নিলে যে চুল ভালো থাকে তা এসব মেয়েরা বোঝে না। যাই হোক, আমি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে কেটে পরলাম সেখান থেকে।


এরপর অনু নামে কেউ ডাকলে আর সারা দিতাম না। ভুল করেও না। আর ইউনিভারসিটিতে নতুন তাই কোন ফ্রেন্ডও ছিল না। ফ্রেন্ড বানানোর চেষ্টাও করিনি। এভাবে প্রায় ৭ মাস পর হঠাত খেয়াল করা শুরু করলাম যে, সেই ৩য় ব্যক্তির সাথে আর ১ম এবং ২য় ব্যক্তির কোন মিল নেই। মানে তারা আর একসাথে থাকে না। সামনাসামনি দেখা হলেও কথা বলে না। বুঝলাম ঝগড়া লাগছে। আর সেই ৩য় ব্যক্তির মন খারাপ। বাহ! আমার তো সেই আনন্দ হচ্ছে। আমাকে আবুল বলেছিল।

হঠাত গেলাম সেই ৩য় ব্যক্তি তথা অনুর কাছে,
- কি ব্যাপার,  ঝগড়া লাগছে নাকি? 😂
- ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
- ব্রেকআপ!!!!  (পুরাই টাস্কি খাইছি)
ভালো তো, বিএফ কি তাইলে নতুন কাউকে পেয়ে তোমাকে ছেড়ে দিলো? 😂
- আরেহ আবুল মিয়া, বিএফ এর সাথে না ওই ২ টার সাথে ব্রেকআপ। আর এমনিতে আমার বিএফ নাই।
- ওই ২ টা মানে!!!
- হাবিবা আর নিপা।
- এরা ছেলে না মেয়ে?
- তোমারে তো আর এমনিতে আবুল কই না।
- না মানে ব্রেকআপ হইছে তো তাই। মেয়ে মেয়ে ক্যামনে ব্রেকআপ হয়?
- ফ্রেন্ডশিপের ব্রেকআপ।
- ফ্রেন্ডশিপের আবার ব্রেকআপ! হা হা হা।  আরো কত কিছুই যে দেখার বাকি আছে। কি নিয়ে ব্রেকআপ হইলো?
- আমি ওদের বিএফ এর সাথে ওদের ব্রেকআপ করে দিছি।
- কি!!! কেন?
- এমনি। মজা লাগে। 😂
- কিভাবে!
- হাবিবাকে একটা ছেলে প্রোপজ করতে আইছিলো। আমি ছেলেটার সামনে বলছি, "দোস্ত তোর ৪ নাম্বার বিএফ এর সাথে কি তোর ব্রেকআপ হয়ে গেছে?  এটাকে আবার কতদিন ঘুরাবি?" এটা শুনেই ছেলেটা হাওয়া। আর নিপার তো কিছুদিন আগে থেকেই রিলেশন। আমার সাথে ঘুরতে ঘুরতে ওর বিএফ এর সাথে দেখা। সেখানে বলেছি, "দোস্ত তোর ৩ নাম্বার বিএফ মানে রাকিব বলদায় তোরে **** রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলছে।" এইটুকুই যথেষ্ট ছিল। 😂
.
এটা বলেই হাসতে হাসতে শেষ। আমার তো ছোট বেলার কথা মনে পরে গেল। মানে ঠিক ছোটবেলা না। মাত্র দেড় বছর আগের ঘটনা।  বড় ভাইদের যে এভাবে কতগুলা ব্রেকআপ করাইছি তার হিসাব নাই। 😂😂😂
.
এরপর আমিও আমার ব্রেকআপ করানোর একটা অভিজ্ঞা বললাম অনুকে,
- যার ব্রেকআপ হইছিলা সে আমার এক ভাই। বয়সে অনেক বড়। নাম সৌরভ। সে দেখতেও জোস আর মেয়ে পটানোতে এক্সপার্ট। যেকোন মেয়েকে মাত্র ১ দিনেই পটিয়ে ফেলতে সক্ষম ছিল। দিনটা স্পষ্ট মনে আছে। ঈদের ঠিক ৩ দিন আগে আমাকে বলতেছিল যে, সে নতুন একটা জিএফ পাইছে। পিকচারও দেখাইলো। দেখতেও সেই। ঈদের মাঝে তাকে নিয়ে ঘুরবে। কত কি প্লানিং।  এসব বলার পর গেল ক্রিকেট খেলতে। সেই ভাই আবার ক্রিকেট খেলে জোস। আমিও দেখতে গেছি খেলা। সে শুধু আমাকে বলেছিল, তার খেলা নিয়ে যেন একটা পোস্ট দেই ফেসবুকে। এবং পোস্টে যেন তাকে ট্যাগ দেই।
অতঃপর আমার মাথায়ও একটা স্ট্যাটাস এসে গেল। তার জিএফ এর ব্যাপার নিয়ে একটা পোস্ট দেই যেখানে সে তার এই নতুন জিএফকে নিয়ে ঈদের দিন ঘুরার প্লান আমাকে বলছে। সাথে এটাও বলছে যে, প্লান কাজে আসবে যদি এই ৩ দিনের মাঝে এটাও ব্রেকআপ না হয়ে যায়।  এই একটা পোস্টই যথেষ্ট ছিল তার ব্রেকআপের জন্য। বেচারার ঈদের আগের দিন ব্রেকআপ হয়ে গেল। আর ঈদের দিন একা একা ঘুরতে হলো তাকে। 😂🔫

এভাবে কিছুদিন পর আমাদের ফ্রেন্ডশিপ বেশ ভালো একটা পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু এখন সমস্যা হইছে অন্যরকম। ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ হওয়ার পর থেকে আমার ক্লাসমেটরা আমাকে বলে,
- ভাই তোর কি কখনো প্রেম করার ইচ্ছা নাই?

কিন্তু কেন যে এই কথা আমাকে বলে তার কোন কারন কেউই বলে না।

এভাবে একদিন আমাদের পাস্ট লাইফ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে অনু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,
- আচ্ছা দোস্ত, তুই কখনও রিলেশন করছিস?
- হ রে। একবার করছিলাম।
- তাইলে চুপ কইরা আছোস ক্যান? কাহিনী কওয়া শুরু কর।
- আরেহ আর কইস না। নতুন নতুন SSC পাশ পরীক্ষা দিছি। রেজাল্ট তখনো দেয় নাই। মাগার পখনা ঠিকই গজাইয়া গেছিলো। ফলাফল, জিএফ জিএফ কইরা গেলাম পাগল হইয়া। কয়দিন পর পাইয়াও গেলাম একখান। নাম সামিরা। কয়দিন পর, মানে মোটামুটি ৮ মাস বুঝলাম মাইয়াডা অতটাও ভালো না যতটা আমি ভাবতাম। এর ১ সপ্তাহর মাঝেই সেই মাইয়ার আসল রুপ আইসা পরলো সামনে। তখন বুঝলাম মাইয়া বিবাহিত। কি আর করার। করলাম ব্রেকআপ। এরপর এখনো পাখনা গজায় নাই। আর কারো পাখনা গজাইতেও দেই না। ব্রেকআপ করাইয়া দেই। 😂🔫
- আবাল নাকি তুই? মাইয়া দেইখা বুঝোস না যে বিবাহিত মাইয়া নাকি সিংগেল?
- আরেহ গরু আমি কি জীবনে দেখছি নাকি তারে?
- মানে!!! না দেইখাই প্রেম? তারমানে ফেসবুকের প্রেম? নাকি রঙ নাম্বার?
- ফেসবুকের প্রেম। যাই হোক, তোর কখনো পাখনা গজায় নাই?
- আর কইস না। প্রায় সেম কাহিনী। SSC দিছি, রেজাল্ট দেয় নাই। পাখনা গেল গজাইয়া। জুটাইয়া নিলাম একটা বিএফ। তাও আবার এফবি থেইকা। ৮-৯ মাস পর বুঝলাম পোলার আরো ৫ টা জিএফ আছে। তাও জানতাম না। এর মাঝে হেতে আবার এক মাইয়ারে নিয়া পলাইছিল। তাই সব জাইনা গেছিলাম। কি আর করার। তর মতই কাহিনী ওইখানেই খতম কইরা দিছি। আর ওই পোলার নাম কি ছিল জানিস?  অর নাম ছিল সামির। আর এর পর থেইকা আমার সামনে কেউ রিলেশনে যাইতে পারে না। যাওয়ার আগেই ব্রেকআপ কইরা দেই। 😂
- কস কি!!!! এত্ত মিল ক্যারে তোর আর আমার!!!! 😂🔫
তোর আমার নামে মিল, কামে মিল, এক্স বিএফ-জিএফ এর নামেও মিল, পাস্ট লাইফও মিলা গেল।  বাকি রইলো কি!!! 😂🔫

(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

একটি ছ্যাকা খাওয়ার গল্প

চিঠি=বাঁশ (২য় পর্ব)