নীল চোখ (৩য় পর্ব)
- পারবো।
(বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম। আসলে এরকম শর্ত দেওয়ার কারন কি হতে পারে? এসব নিয়ে হাজারও প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিল। তবুও না করতে পারলাম না। হয়ত আসলেই অনেক ভালবাসি।)
- পারবো বলে গাধার মত দাঁড়িয়েই থাকবেন, নাকি প্রপোজও করবেন?
- করলাম তো (বোকার মত)
- এইভাবে কাউকে প্রপোজ করে? মুভি দেখেন না? 😡
- ইয়ে মানে, টাইম পাই না তো। আগে কিছু মুভি দেখেছিলাম। তবে একটা মুভির প্রপোজের কাহিনীই মনে আছে। তবে সেখানে নায়ক তো নায়িকাকে ভালোবাসার প্রপোজ করে নাই, করেছিল সরাসরি কিস এর প্রপোজ। 🙈🙊
- আপনাকে দিয়ে হবে না। আপনি মুড়ি খান।
- না। আমি এহসান খান 😁
- 😑
।
রাস্তার পাশে একটা ঘাস ফুল দেখতে পেলাম। সেটা তুলে নিয়েই প্রপোজ করে ফেললাম। একদম মুভির স্টাইলে এক হাটু ভেঙে প্রপোজ করেছিলাম। দেখেই মনে হচ্ছি ও অনেক খুশি। এরপর আমি বললাম,
- আচ্ছা আপনার নামটা কি?
- প্রপোজের আগে যতক্ষণ জিজ্ঞাসা করেননি তাই এখন আর বলবো না। আর হ্যা, আপনি করে না বলে তুমি করে বললেই আমি বেশি খুশি হব। কারন আপনি আমার থেকে অনেক বড়।
- তাহলে আমি ডাকবো কি নামে? 😲
- নিজে একটা নাম রেখে নিন।
- হা হা হা। অনেক ফান হইছে। এবার নাম বলো।
- বলবো না। বলবো না। বলবো না। আপনি নাম রেখে নিন। সময় হলে আমি নিজেই বলবো।
- তুমি সিরিয়াস?!!!
- আমি আসলেই সিরিয়াস। এখন বলবো না। আপনি একটা নাম রেখে নিন। তাড়াতাড়ি নাম রাখেন। আমাকে আবার বাসায় যেতে হবে।
- নীলা (হঠাত করেই মুখ থেকে বের হয়ে আসলো। হয়তো নীল চোখের জন্যই এমন নাম মনে আসলো।)
- ওকে। গুড চয়েজ।
- আমার নাম না শুনেই চলে যাচ্ছ?
- আপনার নাম এহসান খান অনিক। সার্টিফিকেটে এহসান খান। আর ডাক নাম অনিক। ফ্রেন্ডরা অনু বলে ডাকে। তাই তো?
- হ্যাঅ্যাঅ্যা (অবাক হয়ে গেলাম। বড় বড় চোখ করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইলাম)
।
হেসে একটা মোবাইল নাম্বার দিয়েই চলে গেল ও। বুঝলাম না কিছুই। দেখে অনেক খুশি মনে হচ্ছিল। তবে আমার নাম কিভাবে জানলো সেটা নিয়েই কনফিউশন। পরিচিত কেউ না তো আবার? 😲
।
প্রথমবার কল করতে অনেক ভয় হচ্ছিল। কখনো কোন মেয়েকে এভাবে কল দেইনি তো। তাও দিলাম। ধীরে ধীরে কথা শুরু হল। আমাদের কথা চলতে থাকলো।
।
১ মাস পর আমি ভাল একটা জব পেয়ে গেলাম। এবার তো লাইফ সেট। অপেক্ষায় ছিলাম শুধু ওর এক্সামের। আর ৯ মাস পর ওর HSC এক্সাম। ওর এক্সাম শেষ হলেই ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব।
।
এতদিন কথা বলে যা যা জানতে পারলাম তা হল,
ও খুবই সহজসরল মেয়ে। মেকাপ একেবারেই পছন্দ করে না। সাজগোজ একদমই করে না। তেলাপোকা ভয় পায় না কিন্তু ভূত, পিপড়া আর ইদুর এই ৩ টা জিনিস দেখলে ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়। ছোটবেলায় একবার পিপড়া অর নাকে চলে গিয়েছিল নাকের ভিতর কামর দিতে দিতে একদম শেষ করে ফেলছিল ওকে। সেই থেকে পিপড়াকে বাঘের থেকেও বেশি ভয় পায়।
অবশ্য মাঝে মাঝেই আমি ওকে ভূতের ভয় দেখাতাম। ওকে তো বিশ্বাসও করিয়ে ফেলেছিলাম যে আমার পোষা ভূত আছে। আর সেটার ভয়ে যে কতক্ষন কান্না করছিল। সেই কান্না থামানো যে কত ভয়ংকর ব্যাপার ছিল তা শুধু আমিই জানি।
।
সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট। পড়াশোনা ভাল লাগে না। বড় হয়ে আদর্শ বউ হওয়ার শখ 😹🔫। স্টুডেন্ট খুব ভাল না, মধ্যমানের স্টুডেন্ট, আর এজন্যই পড়ার প্রতি আগ্রহ কম। ফেভারিট সাবজেক্ট উচ্চতর গণিত (এটা শুনে আমি ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। কারন ওর পড়াশোনার যা অবস্থা শুনলাম তাতে এটা ওর ফেভারিট সাবজেক্ট হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না)। কারণ এটা ওর অপশনাল। পাশ করলেও কিছু না ফেইল করলেও কিছু না। 😹🔫
আর হ্যা, ও আমাকে অনেকদিন আগে থেকেই খেয়াল করেছে যে আমি ওইখানে দাড়াই। এবং ও সিওরও ছিল যে আমি ওর জন্যই দাড়াই। আর ও এটাও জানে যে রাইসাকে আমিই পাঠিয়েছিলাম। কারন সেদিন ও ছিল বোরকা পরা ওকে দেখে আরেকজনের বোনের মত লাগলেও চেনার কথা না। কারন চেহারা তো ঢাকা। আর ও চলে যাওয়ার পর রাইসার সাথে আমার কথা বলাও দেখেছিল। আর সেদিন থেকেই ও এই সব বিষয় জানে।
এসবকিছু শুনে সত্যিই আমি অবাক। কারন কতটা বুদ্ধির দরকার এসব এত সহজে বুঝতে গেলে! মানতেই হবে মেয়েটা আসলেই বুদ্ধিমতী।
আর আমার নাম জানলো কিভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন করাতে যা উত্তর দিলো তা শুনে আমি মানতে বাধ্য হয়েছি যে মেয়েটা আসলেই সাধারণ মানুষ না, এলিয়েন।
ওর এক বান্ধবীর বিএফ এর ফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ডের ৩য় জিএফ এর কাজিনের আংকেল আমার সাথে পড়ত। তার থেকেই আমার নাম এবং ডিটেলস জানছে।
এরপর আবার জিজ্ঞাসা করি, আমি কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম তা ও কিভাবে জানলো। এটার উত্তর ছিল আরো ভয়ানক।
আমার ওপর সন্দেহ হওয়ার পর ও আমাকে ফলো করছিল একদিন!!! সেদিনই জানতে পারছিল।
।
ভালই চলছিল সব। আমরা অন্যদের মত হাত ধরে ঘুরে বেড়াইনি, অন্যদের মত ডেটে যাইনি, অন্যদের মত পার্কে যাইনি, অন্যদের মত সারাদিন ফোনে কথা বলিনি, অন্যদের মত সেল্ফি তুলিনি তবুও আমরা অনেক হ্যাপি ছিলাম। প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় কথা বলতাম। মাঝে মাঝে ওকে দেখতে ইচ্ছা করলে কলেজ ছুটির সময় কলেজের সামনে দাঁড়াতাম। ছুটি হলে ওর সাথে হেটে ওকে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে আসতাম ওর বাসার দিকে। এই ছিল আমাদের ভালোবাসা।
।
২ মাস এভাবেই চলল। আমি অনেক ভাল একটা চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে গেলাম। ইন্টার্ভিউ অনেক ভাল হয়েছিল। এরপর বাসায় এসে কল দেওয়ার চেষ্টা করলাম নীলাকে। তবে ওর নাম্বার অফ। সেই যে অফ হল আর কখনো অন পাইনি। এরপরের ২ মাস আবার রেগুলার ওর কলেজের সামনে যেয়ে দাঁড়াতাম। সেখানেও কখনো দেখিনি। অন্যদিকে আমি ওর কোন ফ্রেন্ডকেও চিনি না। আসলে ওর সেরকম কোন ফ্রেন্ডই ছিল না। আবার বাসাও চিনি না। চেহারা কেমন তাও জানি না। মোট কথা ওর সাথে যোগাযোগ করার বা ওকে খুজে বের করার আর কোন অপশনই ছিল না আমার কাছে। তবুও আমি হাল ছাড়িনি। আমার বিশ্বাস ও হয়ত কোন সমস্যায় পড়েছে। ও যেদিন সুযোগ পাবে সেদিনই আমাকে কল দিবে এটা আমার বিশ্বাস। কারন আমি জানি ও আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।"
।
নীলিমা - আচ্ছা, তারমানে বড় মাপের ছ্যাকা খাইছেন। আগেই ভাবছিলাম। 😹
আমি - শাট আপ। এখানে ছ্যাকার কি হল? আমি জানি ও আমাকে অনেক ভালবাসে। আর হয়ত কোন সমস্যার কারনে যোগাযোগ করতে পারছে না।
নীলিমা - হেহেহে কখনই না। মেয়েটা আপনার সাথে টাইম পাস করছে। যদি তাই না হবে তাহলে অন্তত নামটা তো বলতই। কিন্তু সে আপনাকে তার নিজের সম্পর্কে কিছুই বলে নাই। আমি আমিও তো একটা মেয়ে, তাই আমি কিছু হলেও বুঝি মেয়েরা ভাবতে পারে আর কি করতে পারে। সে জীবনেও ফিরে আসবে না। আর যদি কখনো আপনাকে কল দেয় তাহলে সিওর বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার জন্যই কল দিবে। 😹
আমি - এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ও অনেক ভাল মেয়ে আমি জানি। আর তাছাড়া এমনটা কখনই হবে না। আমি ওভার সিওর। আর ও আমার সাথে মোটেই টাইম পাস করার চেষ্টা করেনি। ও আমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে। আমি জানি।
নীলিমা - কেন? সংসার করছেন নাকি তার সাথে? 😹
আমি - কি আজব!!! একজন মানুষকে চেনার জন্য তার সাথে সংসার করতে হয় নাকি?
নীলিমা - মানুষ না মেয়ে মানুষ। 😹🔫
আমি - আপনার সাথে আর কোন কথা বলার ইচ্ছা আমার নাই। নেগেটিভ চিন্তায় মন ভরা আপনার। সারাজীবন ব্যাচেলার থাকলেও আপনাকে বিয়ে করবো না।
নীলিমা - দেখা যাক। বিয়ে আল্লাহ জন্মের আগেই ঠিক করে রাখেন। এখানে আমার বা আপনার ইচ্ছা খাটবে না।
আমি - হুম। দেখা যাক। আমার বিশ্বাস, আমার বিয়ে ওর সাথেই হবে।
নীলিমা - হিহিহিহিহি। আমার মনে হচ্ছে আপনার এ আশা জীবনেও পূরন হবে না। 😹🔫
আমি - ১০০ বার হবে।
নীলিমা - আচ্ছা তাহলে আসেন বেট লাগি।
আমি - কি নিয়ে?
নীলিমা - যদি আপনার সেই আগের জন্মের জিএফ আই মিন আপনার সেই নীলা যদি আপনাকে কল দেয় তাহলে আপনি তাকেই বিয়ে করে নিবেন। আর যদি তা না হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করতে হবে। রাজি?
আমি - আজব!!! আমি জানি ও কল দিবেই। হতে পারে ১ বছর পর কল দিল। তাই না?
নীলিমা - সমস্যা নাই। আমিও অপেক্ষা করবো। আমি সিওর আমিই বেটে জিতব। 😎
আমি - হেহেহে। তোমার আব্বু-আম্মু তোমাকে বসিয়ে রাখবে এতদিন?
নীলিমা - সে চিন্তা আপনাকে করতে হবে না। আপনি রাজি কিনা তাই বলেন?
আমি - ওকে। রাজি।
নীলিমা - তাহলে বাসায় যেয়ে এটা বলবেন না যে আপনি বিয়েতে রাজি না।
আমি - কেন!! এটা না বললে তো বিয়ে হয়েই যাবে।
নীলিমা - বিয়ে আল্লাহর হাতে যদি লেখা না থাকে তাহলে আমাদের বিয়ের আগেই কল আসবে। দেখা যাক আপনার বিয়ে কার সাথে লেখা।
আমি - না। আমি রাজি না। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো।
নীলিমা - তাহলে একটা কাজ করেন, বিয়ের ডেট টা ১ বছর পর ঠিক করেন। এই ১ বছর অপেক্ষা করে দেখেন।
আমি - নট ব্যাড আইডিয়া। ওকে। বাসায় যেয়ে ভেবে জানাবো।
নীলিমা - ওকে।
।
।
বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসতে আসতে ৯ টা বেজে গেল। বড়রা যে এত গল্প করতে পারে সত্যিই আন্দাজই করতে পারিনি। বাসায় এসে শুধু ভাবছি এসবও দেখার বাকি ছিল জীবনে! এইরকম মেয়ে আমার জীবনে দেখি নাই। আল্লাহ যেভাবেই হোক, নীলা যেন তাড়াতাড়ি কল করে। 😖
।
আম্মু আসছে রুমে। জিজ্ঞাসা করলো,
- মেয়ে কি পছন্দ হইছে?
- কালকে জানাবো। এখন ঘুম আসতেছে। চিন্তা করে জানাব।
- হুম। তাড়াতাড়িই জানাস। কাল ডেট ফাইনাল করে আসি।
- 😑
।
আম্মু চলে গেল। আমার অনেক ঘুম আসছে।
।
হঠাত মোবাইলের রিংটোন এ জাগ্রত হলাম। মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। মোবাইল হাতে নিলাম। আগে টাইম টা দেখলাম। ১২ টা ৩৭ মিনিট। এবার নাম্বার দেখে সত্যিই অবাক। শুধু অবাক না আনন্দে রীতিমত নাচতে ইচ্ছা করছিল। এ তো নীলার নাম্বার। সেভ করা নাম্বারটা। রিসিভ করলাম,
আমি - হ্যালো
নীলা - কেমন আছেন?
আমি - সামনে পেলে এমন একটা ঘুসি দিতাম। তাহলেই বুঝতে পারতে কেমন আছি। তুমি কেমন আছ?
নীলা - আমি ভাল আছি।
আমি - তাহলে মন খারাপ কেন মনে হচ্ছে? আর এতদিন কি হয়েছিল?
নীলা - আসলে সরি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। প্লিজ। (এটা বলেই কান্না শুরু)
আমি - আরেহ হয়েছেটা কি সেটা তো বলো আগে।
নীলা - আমার বিয়ে হয়ে গেছে। লাস্ট কথা বলার সময় আব্বু দেখে ফেলেছিল। আর এরপর আমার মোবাইল নিয়ে গিয়েছিল। বাসা থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। ২৪ ঘন্টা পাহারা দিয়ে রেখেছিল। আপনার সাথে যোগাযোগের কোন উপায় ছিল না। কোন রাস্তা পাই নি। জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আজ আমার বিয়ের ৯ম দিন। আর আমি আব্বুকে-আম্মুকে ছুয়ে কথা দিয়ে আসছি যে আমি এখানেই সংসার করবো। তাই আমি এখন নিরুপায়। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন প্লিজ। আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। আর ভাল থাকবেন।
।
(চলবে)
Comments
Post a Comment