চোরের চিঠি
প্রতি রাতেই আম্মুর সাথে আমার ৭-৮ বার ঝগড়া লাগেই। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত আম্মুর সাথে আমার ঝগড়া লাগে আর রাত ১২ টা থেকে সকাল ৫ পর্যন্ত আমার সাথে আম্মুর ঝগড়া লাগে। মানে, সন্ধ্যা থেকে আমি পড়ি কিন্তু আমার পড়া আম্মুর চোখে পড়া মনে হয় না। তাই আম্মুর সাথে আামার ঝগড়া লাগে। আর রাত ১২ টা থেকে আম্মু ঘুমাতে বলে কিন্তু আমি ঘুমের ভান করে মোবাইল আর ল্যাপটপ নিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দেই। সেটার জন্য আমার সাথে আম্মুর ঝগড়া লাগে।
আজও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। আর ফলাফল সরূপ প্রতিদিনের মত আবার আমি আমার সকাল ৮ টা এবং ৯ টার প্রাইভেট মিস করে ফেললাম। অতঃপর আবার আম্মুর বকা।
।
রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় যেয়ে দেখি চিঠির মত ভাজ করা কাগজ। তুলে নিলাম। সাধারণত কাগজ পেলে সেটা পড়ার অভ্যাস আমার একেবারেই নেই। তাও পড়া শুরু করলাম। কাগজটাতে এমন লেখা ছিল,
"প্রিয় বাসার সদস্যগণ,
আশা করি সবাই ভালই আছেন। তবে আমি ভালো নেই। আমার ভালো না থাকার কারন আপনারা। হ্যা আপনারাই।
।
আপনারা কি মানুষ না অন্য কিছু? রাতে কি ঘুমাতে মন চায় না? আপনাদের মত মানুষদের প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে মন চায়। কিন্তু পারি না।
।
আমি একজন অতি সাধারন চোর। কি মনে করেই যে আজ আপনাদের বাড়ি এসেছিলাম চুরি করতে তা আল্লাহই জানে। ভেবেছিলাম আপনাদের বাসা থেকে অনেক কিছু চুরি করতে পারবো। কিন্তু ধারনা পালটে গেল।
।
জানেন কি ক্ষতি টা করেছেন আপনারা আমার?
গতকাল রাত ১২ টার দিকে এসেছিলাম চুরি করতে। আমি আসা মাত্রই বাসায় চিল্লাচিল্লি। মনে হইলো কি ঝগড়া। অপেক্ষা করতে লাগলাম। রাত ১ টার দিকে চিন্তা করলাম, এখন সময় হয়ে গেছে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। মাত্রই বাড়ির দিকে আগাতে গেলাম এর মাঝেই এত ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। এবারে ২ টা ৩০ এর পর আসলাম। সব কিছু নিরবই ছিল। তাই ছাদে উঠেও গেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ যে ঝগড়া শুরু হল তাতে আমি ভয়ে বাসার পাশের ময়লা পানির খাদে লাফ দিতে বাধ্য হলাম। এরপর বাড়ি ফেরত যেয়ে জামাকাপড় পালটে আসলাম। আর মনে মনে চিন্তা করলাম আজ আমি এই বাড়ি চুরি করেই ছাড়বো। চলে আসলাম, ৩ টার দিকে। এবারও সব নিরব, মাত্রই চিন্তা করছি যে এখন কাজ শুরু করা যায়। এর মাঝেই ভিতর থেকে ভাঙাচুরার শব্দ শুরু। আর চিল্লাচিল্লি তো আছেই।
৪ টার সময় ঠিক করলাম এখনই শুরু করবো আর দেরি করা যাবে না। ঠিক তখনই আবার মনে হল, আবার জিনিশপত্র চেলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এবং তখন দরজার নিচ দিয়ে আমার সামনে এসে পরে একটা কলম আর খাতা। ভিতরে কি হচ্ছে দেখার জন্য দরজার নিচ দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে গেছি মাত্র এর মাঝে কি যেন একটা এসে আমার মুখ দিয়ে পেটের ভিতর চলে গেল। ফ্লোরে অনেকগুলা ঈদুর মারা ওষুধ দেখেই বুঝলাম হয়তো এগুলারই একটা আমার পেটে চলে গেছে।
।
কি যে করবো ভয়ে বুঝতেই পারছিলাম না। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম কি করবো আমি। আমি বাসা থেকে দূরে চলে গেলাম। বমি করার চেষ্টা করছিলাম। এর মাঝে কোথা থেকে যেন একটা কুকুর ছুটে এসে আমার পশ্চাৎদেশে সজোর কামর বসিয়ে দেয়। তখন তাড়াতাড়ি হাসপাতলের দিকে যেতে যাবো ঠিক তখনই মনে হল আমার খুব টয়লেটে যাওয়া দরকার। মাঠের মধ্যে তো আর টয়লেট নাই। তাই ওখানেই বসে পরলাম। সব শেষ তো করলাম কিন্তু পানি তো নাই। পানির জন্য আবার এই বাসার দিকে আসলাম। কারন আসার সময় টিউবওয়েল দেখেছিলাম।
।
টিউবওয়েলে যেয়ে জোরে চাপ দিতেই এমনভাবে পরছি, হাড় যে কয়টা ভাঙলো জানি না। টিউবওয়েল যে ভাঙা তা তো আর আমি জানতাম না।
।
সব শেষে বাসার ভিতর দিয়ে রাস্তার কাছে যাচ্ছিলাম বাসায় ফেরত যাওয়ার জন্য। ঠিক এমন টাইমে হঠাত শুনতে পেলাম,
- অনিক কি ঘুমাইছিস? নাকি এখনো মোবাইল নিয়ে আছিস।
- আম্মু আমি ঘুমাইয়া গেছি। আমারে ডাইকেন না।
।
এই নিয়ে আবার ঝগড়া শুরু। মেজাজ টা এমন খারাপ হইলো যে এই চিঠি টা না লখে আর পারলাম না। এরপর সেই খাতা আর কলমে। এই চিঠি টা লিখে যাচ্ছি। এই চিঠিটা লেখার সময়ও ১০ বার টয়লেট হয়ে গেছে।
।
আপনাদের জন্য, আজ আমি আমার গফের সাথে ডেটিং এ যাইতে পারবো না। আমার পশ্চাৎদেশে কত গুলা ইঞ্জেকশন যে নেওয়া লাগবে তা আল্লাহই জানে। আল্লাহ আপনাদের বিচার করবে। আপনার জন্য একটা নিষ্পাপ ছেলের আজ ব্রেকাপ হয়ে যাবে। ভর্তি হতে হবে হাসপাতালে।"
।
চিঠিটা পড়ে একরকমে অবাক আবার হাসিও পাচ্ছিলো। তবে এটা সিওর ছিলাম যে, বেচারা চোর নিশ্চিত পড়াশোনা করে বা কোন একসময় করেছিল। এক কথায়, শিক্ষিত চোর। কিন্তু দুঃখ হচ্ছিলো অনেক বেশি। কারন, দরজার নিচ দিয়ে যে ইদুর মারা ওষুুধটা বেচারার পেটে গিয়েছিল সেটাও ডেট ওভার ওষুধ ছিল। আর যে কুকুরে কামর দিছিলো সেটা আমারই কুকুর ছিল। আর টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। আজ সারার কথা ছিল। কিন্তু মোবাইলের কারনে টাইম পাই নাই। আর সারা রাত আম্মুর সাথে এমন ঝগড়া তো আমার রেগুলারই চলে।
।
সব মিলিয়ে একরকম দুঃখই পেলাম। তাই এফবিতে এসে ফিলিং স্যাড দিয়ে একটা পোস্ট দিলাম।
।
কিছুক্ষণ পর নুপুরের কল।
আমি - হ্যালো। কেমন আছো?
নুপুর - ভালো। আমি কি তোমার সাথে ঝগড়া করছি আজ?
আমি - কই, না তো। কেন?
নুপুর - আমি কি তোমাকে প্যারা দেই?
আমি - মোটেই না। এসব বলছো কেন। কি হইছে?
নুপুর - তোমার জিএফ কয়টা?
আমি - জিএফ মানে!!! আজব তুমি ছাড়া আমার আর কেউ আছে নাকি?
নুপুর - রসের কথা বাদ দিয়ে সত্যি করে বলো তো কয়টা মেয়ের সাথে তোমার রিলেশন?
আমি - একটাও না।
নুপুর - তাইলে আমি কি তোমার বোন লাগি নাকি? 😡
আমি - আরেহ, বাবু এসব কি বলো। মানে, আমি বোঝাতে চাইছি তুমি ছাড়া আর কারো সাথেই আমার রিলেশন নাই।
নুপুর - তাইলে এফবিতে ফিলিং স্যাড দিছো কেন? কার সাথে ব্রেকাপ হইছে তোমার?
আমি - আরেহ না। তেমন কিছু না। এটা অন্য ব্যাপার
নুপুর - কি ব্যপার?
।
এরপর পুরা ঘটনা নুপুরকে শোনালাম। তারপর,
আমি - এবার বুঝছো ব্যাপার টা। তাছাড়া আমি তো তোমাকে ছাড়া কোন মেয়ের কথা চাইলেও ভাবতে পারি না। স্বপ্নেও না।
নুপুর - আচ্ছা, তার মানে যদি ভাবতে পারতে তাহলে অবশ্যই ভাবতে। তাই না?
আমি - মানে কি!!
নুপুর - যা জিজ্ঞাসা করছি তাই বলো। যদি পারতে তাহলে ভাবতে, তাই না?
আমি - কিন্তু ভাবতে তো পারি না।
নুপুর - ও এইরকম ভালোবাসো আমাকে। যাও ব্রেকাপ। আর আমাকে কল দিবা না।
।
কল যে কাটলো সাথে সাথেই মোবাইল অফ। কি আর করার সকাল সকাল এইরকম বাশ। সব দোষ এই সালার চোরের চিঠির।
Comments
Post a Comment