নীল চোখ (২য় পর্ব)




এবার আর উপায় না পেয়ে ঠিক ওই রাস্তায় চলে গেলাম যেখানে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। সারাদিন দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখা পেলাম না। পরেরদিন আবার গেলাম। সারাদিন অপেক্ষা করলাম, দেখা পেলাম না। এভাবে ৯ দিন যাওয়ার পর ঠিক একই টাইমে মেয়েটার দেখা পেয়ে গেলাম। মনের মাঝে লুঙ্গি ডান্স শুরু হয়ে গেল।

মেয়েটা আসছে। সেই মায়াবী নীল দুটি চোখ তার। আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম তবে সাহস হল না। অবশ্য ফলোও করতে চেয়েছিলাম। তবে এমন কখনো করা হয়নি বলে নতুন করে আর এই দুঃসাহস করলাম না।

মনের আনন্দে বাসায় চলে আসলাম। বিকালে সব ফ্রেন্ড আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাত এই ঘটনা বললাম সবাইকে। তখন রাইসা বলে উঠল,
রাইসা - মামা, তুই কি মেয়েটারে দেখছিস?
আমি - হ মামা।
রাইসা - কেমন দেখতে?
আমি - চোখ ২ টা নীল। লম্বা ৫ ফুট ২ ইঞ্চির আশেপাশে হবে। আর বোরকা পরে আসে। কালো বোরকা। কিন্তু তাও এত জোস লাগে দেখতে।
রাইসা - ব্যাটা তোরে জিজ্ঞাসা করলাম কি আর উত্তর দিলি কি। চেহারা দেখছিস? 😒
আমি - আরে নাহ। ও তো বোরকা পরে আসে।
রাইসা - হইতে পারে ওইটা আন্টি।
আমি - না না। হতেই পারে না। চোখ দেখে অত বয়স তো মনে না
রাইসা - বাহ। ভালই তো। তুই জ্যোতিষ হয়ে যা। চোখ দেখে বয়স বলে দিবি। 😒
আমি - আরে না। সত্যিই মামা ওকে দেখলে তুইও বুঝবি। দেখতে বাচ্চা বাচ্চা হবে হয়ত।
তাওহীদ - হতে পারে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। মানলাম বয়স কম। কিন্তু নতুন বিবাহিত হতে পারে।
রাইসা - কথায় লজিক আছে।
আমি - ধুর। কোথায় তোরা আমারে হেল্প করবি। তা বাদ দিয়ে যত নেগেটিভ কথা আছে সব শুরু করে দিছিস।

পরেরদিন আবার একই টাইমে দাঁড়ালাম সেখানে তবে সেদিন আর পেলাম না। এভাবে আবার ৬ দিন দাঁড়ানোর পর আবার পেলাম। এবার মেয়েটাকে ফলো করলাম। ফলো করতে করতে কলেজ পর্যন্ত আসলাম এবং বুঝলাম মেয়েটা এই কলেজে পড়ে। আর এই টাইমে কলেজে আসে। সব তো ঠিক আছে তবে বিবাহিত কিনা তা জানার দরকার।

এই কাজের জন্য রাইসা একদম পার্ফেক্ট। পরেরদিন কলেজ থেকে কিছুটা আগে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার কিছুটা আগে রাইসা। মেয়েটা আসছে। মেয়েটাকে দেখেই রাইসা ওর কাছে যেয়ে বলা শুরু করলো,
- আরেহ সেদিন না তোমার বিয়ে হল?
- হোয়াট!!!! আমার বিয়ে হবে কেন!!! আমি মাত্র ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ি।
- কেন তুমি তাওহীদের ছোট বোন না?
- না তো।
- একদম তোমার মতই দেখতে আমার ওই ফ্রেন্ডের বোন। ঠিক আছে, কিছু মনে করো না।
- না না। ঠিক আছে। সমস্যা নাই।

জানা হয়ে গেল মেয়েটা ইন্টারে পড়ে আর পটানোর জন্য একদম পার্ফেক্ট। আর মেয়েটার কন্ঠও যে এত সুন্দর তাও জানা হয়ে গেল। 😁👌

এই কাজের জন্য রাইসা বড়সড় ট্রিট নিয়েছিল আমার থেকে। তবুও লাভ আমারই হইছে।

এরপর থেকে রেগুলার কলেজে আসার টাইমে আর কলেজ ছুটির টাইমে কলেজের থেকে একটু আগে একটা জায়গায় দাড়িয়ে থাকা আমার ডিউটি হয়ে গেল। যখনই মেয়েটা সামনে দিয়ে যেত হা করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে তাকতাম। কিন্তু মেয়েটা কখনই আমাকে দেখেনি, তাকানো দেখিনি কখনো এদিকে।

এভাবে ২ মাস এই একই কাজ করেছি। যদিও ১ মাস পর থেকেই প্রতিদিন প্রপোজ করার উদ্দেশ্য নিয়েই বের হতাম তবে ওকে দেখলেই ভয়ে আর সাহস হত না। তবে এবার তো আমিও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজ প্রপোজ করবই।
মেয়েটা আসছে এদিকেই। হাতে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে আমি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন টাইমে একটা ছেলে এসে ওকে প্রপোজ করে দিল!  আমি অবাক! কিন্তু মেয়েটা যে একটা ঘুসি দিল ছেলেটার নাকে। দেখেই কাজ হয়ে গেছে। চুপচাপ আগের জায়গায় ফিরে এসে ফুলটা পিছে লুকিয়ে ফেললাম। পরেরদিন আর যাইনি। আসলে ভয়ের কারনে না। অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম অনেক। তাই পরাপর ৭ দিন যেতে পারিনি। ৮ম দিন গেলাম আবার।

আজও মেয়েটা আসছে। তবে আজ ঠিক আমার সামনে এসে থেমে গেল মেয়েটা! ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেল এক মুহূর্তেই। এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- আমাকে ফলো করেন কেন?
- কে, আমি?
- না, আপনি না। আমি তো একটা ছাগলকে বললাম।
- না, দেখেন আমি সত্যিই কাউকে ফলো করি না।
- তাহলে প্রতিদিন এখানে কি করেন?
- আমি? আমি তো এখানে ফ্রেস বাতাস খেতে আসি। এখানকার বাতাস অনেক ফ্রেস।
  (ঠিক এই সময়ই একটা ট্রাক গেল সামনে দিয়ে। কালো ধোয়া আর ধুলার মিশ্রণযুক্ত বাতাস এসে গায়ে লাগলো। নাকে হাত দিতে বাধ্য হলাম। কারন আমার ধুলায় এলার্জি। এটা দেখে মেয়েটা হো হো করেই হেসে দিল।)
- আসলেই এত ফ্রেস বাতাস আর কোথাও পাবেন না। হা হা হা
- না মানে। সব সময় তো আর ট্রাক যায় না।
- বুঝতে পারছি। ভালবাসেন?
- এ্যা!!! না,  মানে হ্যা। মানে কি ভালবাসি?
- আমাকে? 😒
- কই না তো। আপনি কে?
না মানে, হ্যা। বাসি তো। অনেক 😖 (ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল আমার)
- হুহ। সারাজীবন মেয়েদের পিছে পিছেই ঘুরবেন। পটাতে আর পারবেন না। আপনাকে দিয়ে এসব হবে না। এর চেয়ে বাসায় যেয়ে ঘুমান কাজে আসবে।
- জ্বি, আচ্ছা।
- আবার আচ্ছা বলে!!! 😡
যাই হোক, গত ৭ দিন দেখলাম না যে আপনাকে। কই ছিলেন?
- আমি?
 হ্যা, আমি তো বাসায়ই ছিলাম 😁
- ওই ছেলেটাকে মারা দেখে ৭ দিন ভয়ে বাসায় ছিলেন!!!????
- আরে নাহ। আমি তো অসুস্থ ছিলাম। আমার কপাল ভাল ছিল। নাহলে ঘুসিটা তো আমার কপালে ছিল।
না মানে, আমি এটা বলতে চাইনি। আমি আসলে বলছিলাম কি, মানে
- হইছে। আমি বুঝতে পারছি। (আমাকে থামিয়ে বলল)
বুঝলাম সেদিন ভয়ে প্রপোজ করেননি। আজও কি ভয়ই পাবেন?
- এ্যা!!!!! 😱
- আচ্ছা থাকেন তাহলে। আমি যাই। হুহ
- এই না। প্লিজ। এই যে শোনেন
- জ্বি বলেন
- আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি (চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বললাম)
- এইভাবে কেউ কাউকে প্রপোজ করে?
 আচ্ছা বলেন তো আমার নাম কি?
 - জানি না
 - আমি কোথায় থাকি?
 - তোমার বাপের বাড়ি। 😂
 - 😑। আমার বাপের বাড়ি টা কোথায়?
 - আল্লাহ!!!  নিজের বাপের বাড়ি কোথায় তাই ই জানো না? 😱
 - ঘুসি কি মারবো নাকি আগেই ভদ্রভাবে উত্তর দিবেন? 😑
 - ইয়ে মানে, জানি না
 - আমি কিসে পড়ি?
 - টেবিল চেয়ারে 😁
 - এমন এক ঘুসি মারবো, বুঝবেন মজা
 - কেন, তাহলে কি আমার মত বিছানায় পড়?
 - 😑 (এমনভাবে তাকালো আমার দিকে যেন মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে।)
 - না মানে, ইন্টার ২য় বর্ষে পড়।
 - হুম। আমাকে দেখেছেন কখনো?
 - হ্যা। কত দেখছি। এখনো তো দেখতেছি ই। 😁
 - 😑
 আমার চেহার দেখছেন কখনো?
 - না।
 - তাহলে ভালবাসলেন কিভাবে?
 - ভালবাসার জন্য দেখার প্রয়োজন হয় না। আর ভালবাসা আগে থেকে এসএমএস দিয়ে আসে না। এটা হঠাতই হয়ে যায়। (দিয়ে দিলাম মুভির ডায়লগের মত একটা ডায়লগ)
 - শুধু মুভির ডায়লগ দিলেই হবে না। সব ছেলেরা একইরকম। তবে আমি চাই একটু ভিন্ন কাউকে। আপনি কি পারবেন ভিন্ন একজন হতে?
 - কি করতে হবে?
 - আমাকে দেখতে পারবেন না বিয়ের আগে। আর কখনো দেখতে চাইবেনও না। চাইলেও আমি দেখতে দিব না। পারবেন তো?
 .
 (চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

একটি ছ্যাকা খাওয়ার গল্প

চিঠি=বাঁশ (২য় পর্ব)

ব্রেকআপ অনু (পর্ব-১)